ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১

বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

সম্পাদকীয়

বর্ষা মৌসুমে এবারে বাংলাদেশে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে বেশি। যে কারণে শরৎ ও হেমন্তেও দেখা দিচ্ছে দফায় দফায় বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি এমনকি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। বাংলাদেশে এবারে কয়েকটি জেলা ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়েছেÑ যাতে মানুষের জানমাল, কৃষি ও মৎস্য খামারসহ শাকসবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। এর সঙ্গে মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একাধিক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস তো আছেই।

যার সর্বশেষ উদাহরণ ঘূর্ণিঝড় দানা। এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে বাংলাদেশে। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বড় কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। এর আগে হামুন, সিত্রাংসহ আরও কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে। 
ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের উৎপাৎসহ অসময়ে বেশি বৃষ্টিপাত সম্পর্কে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিক নয়। তবে নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বেশি দেখা গেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অক্টোবরেও ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপকতা বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে, সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখে দিবারাত্রি সমান হয় এবং এরপর সূর্যের আলো তির্যকভাবে বঙ্গোপসাগরের বুকে পড়তে শুরু করে। ফলে, সাগরের পানি হয়ে ওঠে অতি উষ্ণ। পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাষ্পায়নের গতি অনেক বেড়ে যায় এবং ঘূর্ণিঝড়ের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এটি হতে পারে প্রধানত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। উল্লেখ্য, এ বছর বাংলাদেশে প্রায় বছরব্যাপী অতি উষ্ণ তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা গেছে, যা স্বাভাবিক জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এটি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত কারণসহ আন্তঃমহাসাগরীয় উষ্ণস্রোত এল নিনোর প্রভাবে হতে পারে। যেটি মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাভাবিক আবহাওয়াকে অস্থির করে তুলেছে। যে কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিপর্যয়ের প্রবণতা বেড়েছে সম্প্রতি। 
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ ঝুঁকিতে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। প্রতিবছর একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, ঝড়-ঝঞ্ঝা-অতিবৃষ্টি-বন্যা, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে বিশেষ করে দেশের সুবিস্তৃত সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে। এর অনিবার্য প্রভাব পড়ে সারাদেশেই। সর্বশেষ উদাহরণ অসময়ের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দানা। এর বাইরেও রয়েছে অতিবৃষ্টি, বন্যা, অকাল বন্যা, পাহাড়ি ঢল, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি। দেশে চলতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৭১ লাখ মানুষ।

এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে এক কোটি ৩৩ হাজারের বেশি। মিসরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনেও উঠে এসেছে বিষয়টি। জাতিসংঘ আয়োজিত ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৭) শেষ পর্যন্ত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠনের বিষয়ে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছে। তবে বাস্তবতা এই যে, নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে। তদনুযায়ী নিজেদের সুরক্ষার নিমিত্ত গড়ে তুলতে হবে সুবিস্তৃত উপকূলজুড়ে নিবিড় সবুজ বেষ্টনীসহ যথাযথ অবকাঠামো।

×