ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

পলিথিনের বিকল্প পাটপণ্য

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

পলিথিনের বিকল্প পাটপণ্য

সম্পাদকীয়

পাট, কেনাফ ও আঁশজাতীয় পণ্য উৎপাদনে সব সময়ই ভারতের পরেই অবস্থান বাংলাদেশের। কিন্তু গত চার অর্থবছরের ব্যবধানে ভারতের পাটের উৎপাদন প্রায় ৩৭ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশের উৎপাদন খুব বেশি নেতিবাচক ধারায় না থাকায় ভারতকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী দেশ এখন বাংলাদেশ। বৈশ্বিক পাট উৎপাদনের ৫৮ শতাংশের জোগানদাতা বাংলাদেশ। পাট আমাদের সোনালি ঐতিহ্য। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের নিজস্বতা ও গৌরবের ইতিহাস। পাট বিশ্বব্যাপী সোনালি আঁশ হিসেবে সমাদৃত। 
পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে পাটবীজ উৎপাদনে পাটচাষিদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি দেশের ৪৫টি জেলার ২৮৮টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  পাটের আঁশ কাজে লাগিয়ে কীভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায়, কীভাবে পাটজাতপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো যায়, সেটি নিয়ে কাজ করার অবকাশ রয়ে গেছে। পাটজাত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেবে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই, এমন তথ্য অবশ্যই ইতিবাচক।।
দেশের প্রায় ৪০ লাখ কৃষক পাট উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। দেশের শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানিতে পাট খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশের ওপর প্লাস্টিক ও পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় বিকল্প প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯ ধরনের পণ্যের বস্তায় এবং মোড়কে পাটের ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে বেশ আগে থেকেই। যদিও এটির যথার্থ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে, দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ১৯ পণ্যের জন্য পাটজাত বস্তা/ মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার সক্রিয় হচ্ছে।  সারাদেশে পাটজাতপণ্য ব্যবহারে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে উঠলে নিশ্চিতরূপেই নির্দিষ্ট পণ্যের মোড়কে পাট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যাবে বলে আশা করা যায়। 
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ খাতে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। জন্মরহস্য আবিষ্কার হওয়ায় পাটের সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। বিশ্ববাজারেও পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে। এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ খাতে বিনিয়োগ জরুরি। এছাড়াও এ খাতে গবেষণা আরও বাড়ানো চাই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাট চাষের উন্নয়ন ও পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহারের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এর বহুমুখী ব্যবহারের বিকল্প নেই। স্মার্ট দেশ বিনির্মাণে পাটের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

×