ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

সর্বজনীন পেনশনে সুবিধা

-

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

সর্বজনীন পেনশনে সুবিধা

সম্পাদকীয়

বিগত বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ৪টি স্কিম নিয়ে পেনশন ব্যবস্থা চালু হলেও তখন জনপ্রিয়তা পায়নি। এমনকি এই পেনশন স্কিম নিয়ে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দীর্ঘদিন নানা আপত্তি উত্থাপনসহ আন্দোলন-সংগ্রামও করেছেন। ফলে, বিগত সরকারের কার্যক্রম আদৌ সাফল্যের মুখ দেখেনি। যে কারণে সব স্কিমে নিবন্ধন করেছেন খুবই স্বল্প সংখ্যক মানুষÑ মাত্র ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। তদুপরি প্রবাসী ও বেসরকারি খাতে নিয়োজিতদের আকৃষ্ট করতে ৩টি স্কিম চালু করা হলেও নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৬ হাজার ৪৯১ জন।

অনেকেই এমনকি দুই একমাস কিস্তি পরিশোধ করার পর আর টাকাও দেয়নি। এই প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সর্বজনীন পেনশন স্কিমটি চালু থাকবে কি না, তা নিয়ে জনমনে সংশয়- সন্দেহ সৃষ্টি হয়। অনেক গ্রাহক জমাকৃত টাকা ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ফলে, গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন গ্রাহক নিবন্ধন নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। 
এরকম এক অনিশ্চিত অবস্থায় চলতি মাসের মাঝামাঝি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সচল রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়, যা অবশ্যই ইতিবাচক। তদুপরি বিদ্যমান স্কিমের আওতায় পেনশন গ্রহীতাদের আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬০ বছর পূর্ণ হলেই একজন গ্রহীতা মাসিক পেনশন সুবিধার বাইরে গ্র্যাচুইটি হিসেবে পাবেন এককালীন কিছু অর্থ। এর বাইরে পেনশন সুবিধার আওতায় কেউ অসুস্থ হলে স্বাস্থ্য বিমার অনুকূলে পাবেন আর্থিক সহায়তা।

ঈদ, পূজা ও পয়লা বৈশাখে উৎসবভাতা দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। সর্বোপরি বাড়ানো হবে জমাকৃত অর্থের ওপর সুদের হার। উল্লেখ্য, বর্তমানে পেনশনে সুদের হার প্রায় ৮শতাংশ। অথচ জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদ হার ১৩ শতাংশ এবং সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশ। এর পাশাপাশি আরও একটি সুখবর হলো, এখন পর্যন্ত যেসব গ্রাহক বিদ্যমান পেনশন স্কিমে টাকা জমা দিয়েছেন, তারা ৮শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন খুব শীঘ্রই। 
দেশের ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকার অবশ্যই সাধুবাদ পাবে। দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত। 
মূলত তারাই পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের সে সুবিধা নেই। অবসরবিষয়ক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা এখনো আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ফলে, সর্বজনীন পেনশন চালুর বিষয়টি যুগান্তকারী। বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ধারণাটি নতুন এবং বাস্তবায়নেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকার এ সংক্রান্ত বিশেষ কর্তৃপক্ষ গঠন, তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং পেনশন ব্যবস্থার যেসব শর্ত দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তবে এটি সব শ্রেণির মানুষের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরা জরুরি। পুরো ব্যবস্থাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার আবশ্যকতাও রয়েছে। সর্বোপরি সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে জোর দিতে হবে সর্বাগ্রে।

×