ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প

অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প

বিশ্বায়নের যুগে সামাজিক বিবর্তন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং চিন্তা ভাবনার পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা। পেটের ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি সবাই ঝুঁকছে মানসিক প্রশান্তির দিকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বদলে গেছে মানুষের বিনোদনের উপাদান। এক সময় বিনোদন বলতে পাড়া-মহল্লায় খেলাধুলা, হলে গিয়ে সিনেমা দেখা এবং ঘরে বসে টিভি দেখা বা বই পড়া। কোথাও গিয়ে বেড়ানোর সংখ্যা ছিল খুবই কম। এখন পাড়া-মহল্লায় খেলাধুলার চর্চা সীমিত হয়ে গেছে। হলে গিয়ে সিনেমা দেখাও হয় না অধিকাংশ মানুষের।

টিভি ছাড়াও এখন বিনোদনের বড় অংশ জুড়ে আছে ইন্টারনেট যা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে সবার কাছে। একই সঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়া এবং পর্যটন স্পটগুলোতে বেড়ানোর সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। এক হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যান। ২০০০ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৩/৪ লাখ। পর্যটন খাত আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখছে। এ খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ, পরোক্ষভাবে আরও ৩০ লাখ। এই পরিসংখ্যান খুবই আশাপ্রদ। সমস্যা হচ্ছে এই বিশাল সংখ্যার মধ্যে বিদেশী পর্যটক খুবই নগণ্য।

বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতে পারলে বৃদ্ধি পাবে বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন। বড় হবে আমাদের অর্থনীতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের সেই সামর্থ্য রয়েছে। শুধু নিতে হবে কিছু সঠিক পরিকল্পনা।   
এক সময় থাইল্যান্ডের মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল পর্যটন। এই শিল্পের মাধ্যমে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে তারা শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছে। এই অর্থ দিয়েই অবকাঠামো নির্মাণ করে তারা ব্যাপক উন্নয়ন করেছে কৃষি খাতে। এখনো থাইল্যান্ডের মোট আর্থনীতির ৩০ ভাগ জুড়ে আছে পর্যটন। বছরে প্রায় আড়াই কোটি বিদেশী পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করেন। একইভাবে ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। বিশ্বের বন্দর হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রটি শরিক হয়েছে উন্নত বিশ্বের কাতারে।

এখনো এদের মোট জাতীয় আয়ের ৫০ ভাগ আসছে পর্যটন থেকে। পর্যটকদের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর হচ্ছে দুবাই এবং ব্যাঙ্কক। অন্যান্য জনপ্রিয় শহরের মধ্যে রয়েছে প্যারিস, কুয়ালালামপুর, নিউইয়র্ক, ইস্তান্বুল, রোম, টোকিও ইত্যাদি। দুবাই প্রতিবছর আয় করছে ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ব্যাঙ্কক ২০ বিলিয়ন।  
ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সেক্টর যেমনÑ পরিবহন, হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, এয়ারলাইনসসহ অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম থেকে পৃথিবীর অনেক দেশ প্রতিবছর প্রচুর রাজস্ব আয় করছে। এটি অন্য যে কোনো বড় শিল্প থেকে পাওয়া আয়ের চেয়ে বেশি। আমাদের এই কাতারে শরিক হতে হলে বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই হবে।

এ ছাড়া বিদেশী বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পর্যটনশিল্প। বিনিয়োগ করতে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করতে এসে অনেক বিদেশী নগরিককে মাসের পর মাস এই দেশে থাকতে হচ্ছে। সপ্তাহান্তে সমৃদ্ধ পর্যটন কেন্দ্রই পারে তাদের চাঙ্গা করতে। এমন একটি ঘাটতির কথা প্রায়ই শোনা যায়। পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির চিত্র।
থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার পাশাপাশি আরও কিছু উন্নয়নশীল দেশ পর্যটন শিল্পের প্রতি মনোযোগী হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী নেপাল, ভারত, মালদ্বীপের পাশাপাশি ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিস্তান, পূর্ব ইউরোপের আলবেনিয়া,ক্রোয়েশিয়া ইত্যাদি অন্যতম। নেপাল-মালদ্বীপ ও ভারতের পর্যটন এলাকা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ কমবেশি সবাই অবগত। সম্প্রতি প্রচুর পর্যটক যাচ্ছেন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায়।

২০১৩ সালে একটি সাংবাদিক দলের সঙ্গে ভিয়েতনাম সফরের সুযোগ হয়েছিল। দেশটি আমাদের মতোই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে হাঁটছে দ্রুত। কৃষি ও শিল্পে উন্নয়নের পাশাপাশি দেশটি গুরুত্ব দিচ্ছে পর্যটন শিল্পের দিকে। হা-লং বে তাদের সযতেœ লালিত এমন একটি পর্যটন কেন্দ্র। বিশ্বের সব দেশ থেকে পর্যটক যান হা-লং বে’র সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় থেকে হা-লংয়ের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। গাড়িতে করে যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। কখনো গ্রাম আবার কখনো ব্যস্ত শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে দৃষ্টিনন্দন চার লেনের হাইওয়ে। রাস্তার দুই ধারের প্রাকৃতিক নিসর্গ। রাশি রাশি ধানখেত। প্রচুর পাহাড়-পর্বত-বন। মেঘ-রোদের লুকোচুরি খেলা। কাছাকাছি পৌঁছতেই চোখে পড়ে উপসাগরের অপার সৌন্দর্য। দূরে পানির ওপর ভেসে আছে ছোট-বড় অনেক সবুজ দ্বীপ। সবুজ গাছের ছাউনিতে দ্বীপগুলো খ- খ- সবুজের টুকরো বলেই মনে হয়। পাথর বাঁধানো ঘাট।

সুন্দর ঝকঝকে কাচের দেয়ালে নির্মিত অভ্যর্থনা কক্ষ। ঝকঝকে বিশ্রামাগার, টয়লেট। ছোট-বড় কয়েকশ’ অত্যাধুনিক বিলাসবহুল বোট অপেক্ষা করছে পর্যটকদের জন্য। কোনোটি ছেড়ে যাচ্ছে, কোনোটি ফিরে আসছে। ৭৭৫টি দ্বীপের অধিকাংশই লাইম স্টোনের। প্রতœতত্ত্ব¡বিদদের ধারণা, প্রায় পাঁচ কোটি বছর ধরে ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে পাথরের দ্বীপগুলো। দৃষ্টিনন্দন লাইম স্টোনের দ্বীপগুলোর কঠিন বুক চিরে জন্ম নিয়েছে সবুজ শ্যামলিমা। শান্ত এবং গভীর নীল উপসাগরের পানি। দূরের সবুজ দ্বীপগুলো ক্রমশ ছোট হতে হতে যেন নীল আকাশের সঙ্গে মিশে গেছে। সাগর আর আকাশের নীলে সবুজ দ্বীপগুলো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। হাজার বছর ধরে সাগরের বুকে জেগে থেকে দ্বীপগুলো সৌন্দর্য বিতরণ করছে প্রকৃতিপ্রিয় কোটি কোটি মানুষের মধ্যে।
২০১২ সালে সপ্তমাশ্চর্য ফাউন্ডেশন হা-লং বে’কে বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তমাশ্চর্যের মধ্যে একটি বলে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশেরও দুটি স্থান কক্সবাজার এবং সুন্দরবন এই প্রতিযোগিতায় অনেক দূর এগিয়েছিল। হা-লং বে এখন বিশে^র সকল দেশের পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠলেও সুন্দরবন বা কক্সবাজার নিয়ে আমরা খুব একটা এগোতে পারিনি। এর প্রধান কারণ, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাব। স্থান দুটিকে আমরা পর্যটকদের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে পারিনি। অতীতে কক্সবাজার বা সুন্দরবন নিয়ে অনেক পরিকল্পনার কথা শোনা গেছে। কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হয়নি।

বিশ্বখ্যাত এই পর্যটন স্পট দুটো এখনো দেশী পর্যটকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ইতিহাস অনেকেরই জানা রয়েছে। যুদ্ধের পরও দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় হো-চি মিন সিটির মতো একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলেছে। ভিয়েতনামে এখন সর্বোচ বিনিয়োগ মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের যুদ্ধের স্মৃতিগুলোকেও ভিয়েতনাম ব্যবহার করছে পর্যটন স্পট হিসাবে। বিশ্বের লাখ লাখ পর্যটক ভিয়েতনামে যান এগুলো দেখার জন্য। ২০২৩ সালে প্রায় দেড় কোটি বিদেশী পর্যটক ভিয়েতনাম ভ্রমণ করেছেন। 
প্রকৃতির লীলাভূমি বাংলাদেশে এমন সৌন্দর্যের অভাব নেই। আমাদের আছে মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আছে কক্সবাজারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বালির সমুদ্র সৈকত। সুন্দরবনের মতো সাগর-বৃক্ষের অপার সৌন্দর্যও আছে আমাদের। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-উপত্যকায় মজে থাকা যায় কয়েকদিন। ভিয়েতনামের মতোই কৃষি এবং শিল্পে আমাদের জিডিপি। আমরা শুধু পিছিয়ে আছি পর্যটন খাতে। বিশেষ করে বিদেশী পর্যটক আমাদের দেশে আসেন খুবই কম। পৃথিবীর দীর্ঘতম বালির সমুদ্রসৈকত আমাদের।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ তৈরি হয়েছে। এই মেরিন ড্রাইভ ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ কিলোমিটারে দাঁড়াবে। এত দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ বিশে^র আর কোথাও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট রয়েছে আমাদের। ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার সুন্দরবন হতে পারে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য সুন্দরবনকে পৃথিবীর অন্য যে কোনো পর্যটন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্ররূপে উপস্থাপন করেছে।

জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, নদী ও খাল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্যা দ্বীপমালা। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও চিত্রা হরিণ, কুমির, ডলফিন এবং নানা ধরনের পাখি এই বনভূমির বৈচিত্র্য বাড়িয়েছে। সঠিক পরিকল্পনায় সুন্দরবন হয়ে উঠতে পারে ভিয়েতনামের হা-লং বে থেকে আরও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র। সুন্দর ব্যবস্থাপনায় আসতে পারে লাখ লাখ বিদেশী পর্যটক। 
পর্যটনের আরেক সম্ভাবনার নাম পার্বত্য অঞ্চল। এই এলাকায় পর্যটনের মূল উপকরণ সবুজে ঘেরা পাহাড়। ঋতুভেদে এই এলাকার রূপ বদলায়। শীতে কুয়াশা এবং মেঘে ঢাকা পাহাড়ে সোনালি মিষ্টি রোদ যে কারও মন ভরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বর্ষায় চারদিকে জেগে ওঠে সবুজের সমারোহ। পাহাড় ফিরে পায় তার নতুন যৌবন। ঝরনা, হ্রদ কিংবা নদীগুলো সাজে নতুন রূপে। এই অঞ্চলের মানুষের ভিন্নধর্মী জীবনাচরণ পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। এ ছাড়া আমাদের রয়েছে সিলেট। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রানী সিলেট অঞ্চলের চা বাগান পর্যটকদের মন জুড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

জাফলং, স্বচ্ছ জলরাশির লালাখাল, পাথর জলের মিতালির বিছনাকান্দি, পাহাড় ভেদ করে নেমে আসা পাংথুমাই ঝরনা, রাতারগুল, হাকালুকি হাওড় এবং কানাইঘাটের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য বিশ্বের সকল দেশের পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ,  নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওড় অঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠতে পারে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। আমাদের রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। 
আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই প্রকৃতির দান। নতুন করে তেমন কিছুই করার প্রয়োজন নেই। শুধু দরকার সঠিক পরিকল্পনায় কেন্দ্রগুলো সাজানো এবং যথাযথ পরিচর্যা। প্রকৃতিনির্ভর বিশ্বখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে বাংলাদেশ কিছুতেই পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি ভ্রমণপিপাসু মানুষ এখন পর্যটন কেন্দ্রগুলো পরিভ্রমণ করছে। এখন আমাদের প্রয়োজন বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করা। এজন্য সবার আগে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বিদেশীদের উপযোগী করে তুলতে হবে। কক্সবাজারে অনেক অবকাঠানো গড়ে উঠেছে, আরও হচ্ছে। কুয়াকাটাও এগিয়েছে অনেকটা।

সুন্দরবন, পার্বত্য অঞ্চল এবং সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আরও অবকাঠামো প্রয়োজন। পর্যটনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিরাপত্তা। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই সক্ষমতা অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই এটি প্রমাণ হয়েছে। সারাবছরে একটি মাত্র দুর্ঘটনাই গোটা দেশের পর্যটনশিল্পের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিদেশীরা যতক্ষণ নিরাপদ ভাবতে না পারবেন, তারা কিছুতেই এইসব এলাকায় ভ্রমণে যাবেন না। একই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং, মানসম্মত খাবার, পরিষ্কার টয়লেট ও আরামদায়ক বিশ্রামাগার নিশ্চিত করতে হবে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।  
শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সন্তুষ্ট থাকেন না পর্যটকরা। প্রকৃতি খুব বেশি সময় কাউকে ধরেও রাখতে পারে না। এজন্য বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে বহুমুখী বিনোদনের ব্যবস্থা। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ তাদের সমুদ্র সৈকতগুলোকে সাজিয়েছে এক্যুরিয়াম, ড্রাইভসহ নানা বিনোদনে। পাহাড়ে রয়েছে থিম পার্ক, ক্যাসিনো, ক্যাবল কার ইত্যাদি। বিশ্বের প্রায় সব পর্যটন ঘিরেই রয়েছে বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হলে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখতেই হবে। প্রয়োজনে বানাতে হবে এক্সক্লুসিভ জোন।

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের এক্সক্লুসিভ জোন রয়েছে, যেখানে সেই দেশের নাগরিকদের প্রবেশ নিষেধ। পাসপোর্ট প্রদর্শন করে শুধু বিদেশীরাই এইসব এক্সক্লুসিভ জোনে প্রবেশ করতে পারেন। একই সঙ্গে জোর দিতে হবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং ইতিবাচক প্রচারের দিকে। দেশে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সমাজ বদলের স্বপ্নচারী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি পর্যটনশিল্পকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হলে ত্বরান্বিত হতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।


লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×