ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

ডলফিন সুরক্ষা

-

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

ডলফিন সুরক্ষা

সম্পাদকীয়

ডলফিন টিকিয়ে রাখতে নদী ও জলাশয়ের দূষণ রোধ এবং পানির প্রবাহ ঠিক রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারের পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ডলফিন রক্ষায় স্থানীয় জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। বৃহস্পতিবার মিঠাপানির ডলফিন দিবস উপলক্ষে বন ভবনে আয়োজিত ‘নদীর প্রাণ ডলফিন-শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

বলাবাহুল্য, দেশের নদী ও জলাশয়ে মিঠাপানির ডলফিনের উপস্থিতি আমাদের পরিবেশের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। বাংলাদেশের বিশ্ব পরিচিতি প্রধানত নদীমাতৃক হলেও এখন আর তা জোর দিয়ে বলা যায় না। কেননা, সার্বিকভাবে দেশের নদ-নদীগুলোর অবস্থা রীতিমতো বিপন্ন, এমনকি কোনো কোনোটি মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে বলা চলে। তাই ডলফিনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আমরা যে বিশ্বে বাস করি, সেখানে প্রতিটি প্রাণী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এই বাস্তুতন্ত্রে প্রতিটি প্রজাতির আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে। প্রতিটি জীবই কোনো না-কোনোভাবে পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই জীবজগতের ভারসাম্য বজায় রাখা ও পরিবেশের সুরক্ষার স্বার্থে সব জীবকেই বাঁচার সুযোগ দিতে হবে। 
পৃথিবীতে কোটি প্রাণীর বাস। এই জীববৈচিত্র্যই সৌন্দর্য। বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে জীববৈচিত্র্য হলো উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবসহ পৃথিবীর গোটা জীবনসম্ভার। তাদের অন্তর্গত জিন ও সেগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বাস্তুতন্ত্র। অতি শুষ্ক মরুভূমি থেকে অরণ্য পর্যন্ত, বরফে আবৃত কঠিন পর্বত থেকে সাগরের গভীরে বিস্তৃৃত হয়ে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির জীবজগতের রং, আকৃতি, আকার ইত্যাদির বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট না করে জীবন ধারণ করে আসছে যুগযুগ ধরে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতি হিসাবে সংবিধানে স্বীকৃত। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের শুরুতেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধ্যাদেশ কার্যকর করা হয়েছিল।

যে কটি দেশ জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি বাস্তবায়নের জন্য আইন কার্যকর করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০১৭ সালেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট’ পাস হয়েছে। বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের ৫ শতাংশের বেশি এবং সমুদ্র অঞ্চলের প্রায় ৫ শতাংশ এলাকাকে ‘ঝুঁকিতে থাকা’ এবং সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এমন বাস্তবতায় পাখি রক্ষার বিষয়ে ব্যক্তিবিশেষের পরিশ্রমী প্রয়াস দেখা গেলে আমরা অনুপ্রাণিত হই। পাবনার বেড়া উপজেলার এক ব্যক্তি জঙ্গলঘেরা বাড়ির মধ্যে তৈরি করেছেন পাখির অভয়াশ্রম। পাখিদের নিয়মিত খাওয়ানোসহ সেগুলোকে শিকারিদের থেকে আগলে রাখেন তিনি। অশীতিপর আকাশকলি দাস স্থানীয়ভাবে ‘পাখিবন্ধু’ হিসেবেই পরিচিত। পাখিকে ভালোবাসা ও পাখি রক্ষার বিষয়টি তিনি যেভাবে এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। এভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সবার সচেতনতা জরুরি। ডলফিন দিবস পালন আমাদের নদীরক্ষা তথা জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার তাগিদ দেয়।

×