ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

জাতীয় প্রবৃদ্ধি

-

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

জাতীয় প্রবৃদ্ধি

সম্পাদকীয়

বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কারণে শঙ্কার মুখে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ- অতিবৃষ্টি ও বন্যা, সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ও জ্বালোচ্ছ্বাস। ফলে, কমে যেতে পারে কৃষি উৎপাদন। অন্যদিকে শিল্পাঞ্চলেও বিরাজ করছে অস্থিরতা। ফলে, চলতি বছর দেশে  মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে।

এ নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। বিশেষ করে প্রধান তিনটি বৈদেশিক ঋণদাতা সংস্থা- বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পৃথক প্রতিবেদনে সংস্থাগুলো তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার নতুন হিসেব দিয়েছে। 
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা। এতে এক বৈঠকে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিয়ানো জর্জিয়েভা বলেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এদিকে গত ১৫ অক্টোবর ঢাকায় বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বাংলাদেশ ডেভলেপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে বিশ্ব¦ব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ। এর আগে যা ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাক্কলিত।

অন্যদিকে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর এশীয় ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক এডিবি বলেছে, জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৫ দশমিক ১ শতাংশে। যা আগে প্রাক্কলিত ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখনও পর্যন্ত নতুন করে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি। তবে বিগত বিদায়ী সরকারের প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

দেশের অর্থনীতিতে আপাতত তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা ও বহিস্থ চাপ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে বড় সংস্কারের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সরকারি সেবার মানোন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে জোর দিতে হবে। 
ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, ২০২৩ সাল হবে মহামন্দার বছর। মন্দার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা কমে যেতে পারে। কোনো কোনো দেশে দেখা দিতে পারে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মানও কমতে পারে। সেক্ষেত্রে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশকেও যেতে হবে যথাযথ সংস্কারের পথে।

দেশে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখাসহ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে খাদ্যপণ্য আমদানিতে উৎসে কর ছাড় দেওয়া, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, বিদেশে দক্ষ জনবল প্রেরণ, প্রবাসী আয় বাড়ানো, দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো, সর্বোপরি খাদ্য মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা হতে পারে আগামী দিনের সংকট উত্তরণে সহায়ক।

×