লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, মোনালিসা
২০০৫ সালে নিউ ইয়র্কের দুজন পেইন্টিং এর ডিলার-রবার্ট সাইমন এবং অ্যালেক্স প্যারিশ- নিউ অরলিন্সে একটি ছোট নিলাম থেকে সালভেটর মুন্ডি শিরোনামের একটি পেইন্টিং কিনে নেয়। সেই সময়ে, তারা ভাবেনি যে এটি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির চিত্রকর্ম। ছবিটি খুব ভালো অবস্থায়ও ছিল না। এর কাঠের ফ্রেমে ঘুন ধরে গিয়েছিল। ছবির কোথাও কোথাও রংও উঠে গিয়েছিল এবং ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছিল এর বাঁধাই।
তারা পেইন্টিংটি এভাবেই পান এবং দেখেন যে এটি যেনতেন ভাবে কিছুটা সংস্কারও করা হয়েছে। তারপর ডিলাররা যখন নিশ্চিত হলেন যে এটি লিওনার্দো দা ভিঞ্চিরই আঁকা তখন তারা ছবিটি ডায়ান মোডেস্টিনি নামক একজনের কাছে নিয়ে যান, যিনি পুরোনো ছবি সারাইয়ের জন্য বিখ্যাত এবং তার তদারকিতে পূণরায় খুব যত্নের সাথে পেইন্টিংটিকে সংস্কার করা হয় । তখনই তারা পুরোপুরি ভাবে নিশ্চিত হন যে কাজটি লিওনার্দো দা ভিঞ্চিরই।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ভিঞ্চি ১৫০৫ সালের কিছু পরে ছবিটি এঁকেছিলেন । অনেক দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার পর ২০০৫ সালেই ছবিটি প্রকাশ্যে আসে এবং জানা যায় যে ছবিটি ইতালিয়ান রেনেসাঁর কালজয়ী শিল্পী লেওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা । তারপরই লোকজনের মাঝে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়।
চিত্রটিতে যিশু খ্রিস্টকে ত্রাণকর্তা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। তার পরনে রেনেসাঁর পোশাক, ডান হাতের দুই আঙ্গুল প্রসারিত করে তিনি আশীর্বাদ করছেন, বাম হাতে তিনি একটি স্ফটিকের গোলক ধারণ করে আছেন , যা স্বর্গীয় বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করে বলে মনে করা হয়।
এই পেইন্টিং সম্পর্কে বিখ্যাত চিত্রকর্ম বিশ্লেষক এবং মিউজিয়ামের অভিজ্ঞ কিউরেটরগণ অভিমত দিয়েছেন যে , ছবিতে কক্ষপথে প্রতিফলন, ড্র্যাপারির স্টাইল এবং যিশু খ্রিস্টের কোঁকড়া চুলের ভাঁজ আঁকার যে কৌশল তার সাথে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা কৌশল প্রায় একই। তা সত্ত্বেও, লিওনার্দো বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই একমত হতে পারেননি যে এটি ভিঞ্চিরই আঁকা কিনা। অনেক সমালোচক বলেছিলেন যে পেইন্টিংটি এতোটাই সংস্কার করা হয়েছে যে একে চিহ্নিত করা আসলে দূরহ। কেউ কেউ এমনও বলেছেন যে সালভেটর মুন্ডি লিওনার্দোর একজন ছাত্রের আঁকা কাজও হতে পারে।
পেইন্টিংটি ২০১৭ সালে বিক্রি হওয়ার সময় পৃথিবীতে চিত্রকর্ম নিলামের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দেয়। মাত্র ২০ মিনিট স্থায়ী নিলামে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেয় সালভাতোর মুন্ডি। নিলাম সংস্থা ক্রিস্টিজ নিউ ইয়র্কে পেইন্টিংটি সেসময় নিলামে তুলে। নিলামঘরে উপস্থিত ক্রেতাদের সঙ্গে ফোনেও সংযুক্ত ছিলেন চার আগ্রহী ক্রেতা। ফোনের সেই চার ক্রেতার মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত একজন ছবিটি কিনেছেন ৪৫ কোটি ডলারে যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৭৬১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এযাবৎকালে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে চিত্রকর্মটি যিনি কিনেছেন, তাঁর নাম অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি।
তবে গুঞ্জন শোনা যায় পেইন্টিংটি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সেই চার ক্রেতার একজনকে দিয়ে প্রক্সির মাধ্যমে কিনে নেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সালভেটর মুন্ডি শিরোনামের এই বিখ্যাত চিত্রকর্মটি। বিক্রির পর থেকে আজ অব্দি পেইন্টিংটি আর কখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি ।
শহিদ