ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

ব্রুসেলোসিস প্রতিরোধক ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ২০:১৮, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

ব্রুসেলোসিস প্রতিরোধক ভ্যাকসিন

.

গবাদিপশুর প্রজননতন্ত্রের এক নীবর ঘাতক ব্রুসেলোসিস রোগ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রাণীর গর্ভপাত, বন্ধ্যত্ব মৃত বাচ্চা প্রসবসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি করে। ফলে, খামারি একই সঙ্গে বাছুরও হারায় এবং গাভীর দুধ উৎপাদনও কমে যায়। তাছাড়া পশু চিকিৎসক এবং খামারিরাও রোগে আক্রান্ত হন। অজ্ঞতাবশত মাস্ক, গ্লাভস ছাড়া ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত প্রাণীর বাছুর বের করতে গেলে অথবা পরিষ্কার করতে গেলে মানবদেহে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ যা সহজে সারে না। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের প্রায় - শতাংশ গবাদিপশু রোগে আক্রান্ত। সঠিক সময়ে প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিশাল ক্ষতির সম্মুখে পড়তে হচ্ছে খামারিদের। এমতাবস্থায় অল্প খরচেই ব্রুসেলোসিসের প্রতিরোধক ভ্যাকসিন তৈরি করলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের একদল  গবেষক। তারা জানান, সাশ্রয়ী মূল্যে অর্থাৎ একশ টাকায় খামারিদের ভ্যাকসিন সরবরাহ জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। সাধারণত প্রতিটি অণুজীবের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এর ওপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা। তাই বিদেশী অনেক ভ্যাকসিন থাকতেও ভ্যাকসিনটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় জীবাণু নিয়ে গবেষণা করে তৈরি করা হয়েছে। প্রায় বছর ধরে ময়মনসিংহ, গাজীপুর, সাভার টাঙ্গাইলের প্রায় ৪০০ গাভীর দেহে পরিচালিত ফিল্ড ট্রায়ালে ভ্যাকসিনটির যথেষ্ট কার্যকারিতা প্রমাণিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্রুসেলা অ্যাবোরটাসের আধিক্য বেশি দেখা যায়। ব্রুসেলা অ্যাবোরটাসের বায়োভার- এর বিরুদ্ধে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রাণিসম্পদের অবদান অনস্বীকার্য।  দেশের খাদ্যনিরাপত্তা সুষম পুষ্টি নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাণিসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। করোনাসহ নানা দুর্যোগ মহামারিতে দেশের অন্যতম শক্তি আশার জায়গাও ছিল কৃষি প্রাণিসম্পদ। তাই অর্থনীতির এই খাতে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কাম্য। প্রাণীর বিবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা, নিরোধ, নিয়ন্ত্রণ মোকাবিলা ইত্যাদি প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত কতিপয় প্রধান দিক। এগুলো ছাড়াও জাত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাণীর শ্রীবৃদ্ধি, কৃত্রিম প্রজনন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ইত্যাদি বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা সাফল্য কাম্য।

প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে সরকারি, বেসরকারি ব্যক্তিগত খাতসহ নানা সংস্থা কাজ করছে। ইতোমধ্যে দেশে প্রাণিসম্পদের চিকিৎসা উন্নয়নে প্রযুক্তির উদ্ভাবন সম্প্রসারণের ফলে গবাদিপশুর কৃমিরোগ দমন, পিপিআর রোগের সমন্বিত চিকিৎসা, ক্ষুরারোগ নির্ণয়, পিপিআর রিন্ডারপেস্ট রোগ নির্ণয় পদ্ধতি, বাণিজ্যিক খামারে মুরগির জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, পিপিআর সালমোনেলা ভ্যাকসিন উদ্ভাবন ব্যবহার ইত্যাদি সহজতর হয়েছে। সেই সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ব্রুসেলোসিস রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন, যা কৃষক খামারিরা পাবেন স্বল্পমূল্যে। গবাদিপশুর চিকিৎসায় দেশীয় গবেষক দলের এমন সাফল্য মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলেই প্রত্যাশা।

×