ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

সাত কলেজের সংকট

প্রকাশিত: ২০:১৭, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

সাত কলেজের সংকট

.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্তি এবং স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সায়েন্সল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজের সামনে তারা প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করায় আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়ককে দাবি আদায়ের হাতিয়ার করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সবসময়েই অগ্রহণযোগ্য। তবে অভিন্ন দাবি আদায়ে বছরের পর বছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন এই বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে দেয় যে, একটি সমাধানযোগ্য ইস্যুর সুরাহার জন্য যথোচিত সদিচ্ছা অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত এবং এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও ততটা চিন্তিত নয়। এটা দুঃখজনক।

আজ শনিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে বলা হয়, সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলেও শিক্ষার মানের কোনো উন্নয়ন হয়নি, উলটো শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা দফা দাবি তুলে ধরে বলেছেন, সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সংস্কার কমিটিকে অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধু একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা দিতে হবে এবং তৃতীয়ত, সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে, যাতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ  তৈরি না হয়। স্মরণযোগ্য, শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ সরকারি তিতুমীর কলেজ।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যথার্থই অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ পেলেও তাদের জন্য সে সুযোগ সীমিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো একাডেমিক ক্যালেন্ডার নেই।

শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকও অপ্রতুল। এমনকি কোনো কলেজে নির্দিষ্ট বিভাগে শিক্ষক পর্যন্ত নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, সাত কলেজ সম্পর্কে তাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা থাকলেও সময় সম্পদের যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বক্তব্যে যুক্তি রয়েছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিলে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব। সাত কলেজের দায়িত্ব পালন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিতে পারে।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, একটি সংস্কার কমিটি গঠন করে সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সমাধানের পথ বের করে তার দ্রুত বাস্তবায়ন করাও কঠিন কিছু নয়। তবে আপাতত জরুরি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এসব কলেজের সম্পর্কোন্নয়ন, যাতে উভয়পক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে পারে। বিষয়টি নিয়ে একদিকে সময়ক্ষেপণ এবং অন্যদিকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে সড়ক অবরোধ, দুটোরই অবসান দরকার। 

×