ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

ইসরাইলে নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভের নেপথ্যে

ড. মো. মোরশেদুল আলম

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

ইসরাইলে নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভের নেপথ্যে

ইসরাইলে নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভের

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি বিক্ষোভকারীরা সেনা সদর দপ্তর এবং অন্যান্য সরকারি ভবনের বাইরে জড়ো হয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। আল জাজিরা জানিয়েছে, বিক্ষোভে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল। সেখানে ব্রিটিশ-আমেরিকানরাও বড় সংখ্যায় ছিল। এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা কিনাÑ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে বন্দি প্রায় ১০০ জনকে ফিরিয়ে আনতে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তারা আহ্বান জানায়। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধ করতে চান না বলে তারা অভিযোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ‘ফ্যাসিস্ট’ এবং ‘হাত রক্তে রঞ্জিত’ বলে উল্লেখ করেন তারা। তাদের মতে, নেতানিয়াহু ইসরাইলের জনগণের কথা না ভেবে শুধু নিজের ক্ষমতার কথাই ভাবছেন। এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু প্রশাসন সংকটে পড়েছে। সিএনএন জানায়, সোমবার বিক্ষোভে ইসরাইলের প্রধান বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ অংশ নেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে জানায়, নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে দেশটিতে আগে কখনোই এত বড় বিক্ষোভ হয়নি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখেরও বেশি আহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরাইল নজিরবিহীন অভিযান চালায়। হতাহতের পাশাপাশি অনেক শরণার্থী ক্যাম্প বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে করে পশ্চিম তীরও ধীরে ধীরে গাজা উপত্যকায় রূপ নিচ্ছে। 
গাজায় চলমান যুদ্ধের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে আর কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া উচিত নয় বলে মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স মন্তব্য করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে লেখেন, গাজার একটি মানবিক অঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় ১৯ জন নিহত এবং বহু আহত হয়েছেন।  পশ্চিম তীরে এক মার্কিন কর্মীকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আরেকটি স্কুলে বোমা হামলা হয়েছে, যেখানে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ছয়জন জাতিসংঘের সাহায্যকর্মী ছিলেন।

তিনি দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় চলমান যুদ্ধের জন্য ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে আসছেন। গাজায় থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধবিরতি না হলে আরও অনেক জিম্মির একই পরিণতি বরণ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। জিম্মিদের মৃত্যুর ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সেøাগান দিচ্ছেন। অন্যদিকে, ট্রেড ইউনিয়ন ‘হিস্ট্রাড্রট’-এর ডাকা ধর্মঘটে দেশটির কলকারখানা ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

হিস্ট্রাড্রটের চেয়ার আর্নন ভার-ডেভিড বলেন, শুধু তাদের হস্তক্ষেপই সরকারকে নাড়া দিতে পারে। জিম্মি মুক্তিতে রাজনৈতিক কারণে একটি চুক্তির অগ্রগতি হচ্ছে না; এটা গ্রহণযোগ্য নয়। জিম্মিদের হত্যার ব্যাপারে গ্যালান্ট সতর্ক করেছিলেন, যেমনটি মোসাদপ্রধান ও নিরাপত্তাপ্রধান শাবাকও করেছিলেন। তবুও নেতানিয়াহু কখনো জিম্মি চুক্তি চাননি। তিনি যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন কারণ তার সরকারের গৃহীত অসংখ্য পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ হয়েছিল। যেমন: ইরান, গাজা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক। আর দেশের ভেতরে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা যেমন সাংবিধানিক অভ্যুত্থান, জীবনযাত্রার উচ্চমূল্য প্রভৃতি।

জিম্মি সংকটকে ঘিরে দেশের অভ্যন্তরে বিক্ষোভের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও ইসরাইল সরকারের ওপর ক্রমশ চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেল আবিবে মিছিল করতে গিয়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের শারীরিক নির্যাতন ও আটকের শিকার হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁক উল্লেখ করে ইতোমধ্যেই দেশটির নিকট যুক্তরাজ্য বেশ কিছু অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। হামাসের নিকট বন্দি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে জিম্মিদের মৃত্যু ঠেকানো ব্যর্থতা স্বীকার করে নেতানিয়াহু জাতির নিকট ক্ষমা চেয়েছেন। 
গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইল সফরে গিয়ে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, ছয় জিম্মির মৃত্যুর খবরে বিক্ষোভ দেশটির অন্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, অন্য জিম্মিদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য হামাসের সঙ্গে জরুরিভিত্তিতে আলাচনা এবং চুক্তি করা প্রয়োজন।

নেতানিয়াহু সরকার সেটি না করায় জিম্মিদের প্রাণ দিতে হচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেন। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে জিম্মি ইসরাইলদের ফিরিয়ে নিতে হামাস ফিলাডেলফি সীমান্ত থেকে ইসরাইল সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার শর্ত দিয়েছে। মিসর সীমান্ত ঘেঁষা ১০০ মিটার প্রশস্ত ফিলাডেলফি করিডোর একটি বাফার জোন বা নিরাপদ অঞ্চল। সৈন্য সরিয়ে নিলে গুরুত্বপূর্ণ এই সীমান্ত ব্যবহার করে হামাস অস্ত্র আমদানি শুরু করতে পারে এমন আশঙ্কা জানিয়ে নেতানিয়াহু প্রশাসন হামাসের শর্ত মেনে নিতে রাজি হচ্ছে না।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। গাজায় নিহত জাতিসংঘের কর্মী ও অন্যান্য ত্রাণ কর্মীদের হত্যার ঘটনায় জবাবদিহিতার অভাবও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে তিনি মন্তব্য করেন। গাজায় প্রায় ৩০০ ত্রাণকর্মী মারা গেছেন যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কর্মী জাতিসংঘের বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের প্রতিশোধ বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অত্যন্ত নাটকীয় লঙ্ঘন ঘটছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি সেখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। 
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের গাজা যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়ানোর জন্য নেতানিয়াহু চেষ্টা করছেন বলে ১১ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২-এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। এতে বলা হয়, ‘কমপ্লিমেন্টারিটি’ নীতি ব্যবহার করে এই তদন্তের মাধ্যমে নেতানিয়াহু আইসিসি-কে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, ইসরাইলের নিজস্ব বিচারিক প্রক্রিয়ায় অভিযোগগুলোর তদন্ত হচ্ছে। এতে করে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।

তবে আরেকটি সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানায় যে, তদন্ত দ্রুত শেষ করার উদ্দেশ্যেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপটি এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে আইসিসি’র প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার চেষ্টা করছেন। ইসরাইলের অ্যাটর্নি জনোরেল গালি বাহারাভ মিয়ারা অবশ্য নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপকে একটি কৌশলী চাল হিসেবে অভিহিত করেছেন। একটি রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিশনই কেবল আইসিসির মানদ- পূরণ করতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু নেতানিয়াহু তার সরকারের অধীনে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিশন রাজনৈতিকভাবে তার অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে বলে নেতানিয়াহু শঙ্কা করছেন।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা না হওয়া প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে কথা বলিনি কারণ তিনি আমার ফোন ধরেননি।’ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের সময় নেতানিয়াহু তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি আছেন বলে জানান। বর্তমান পৃথিবীর অবস্থাকে বিশৃঙ্খল উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনের বাত্তির জাতিসংঘের ইউনেস্কার বিশ^ ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গ্রামটিই অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনের সর্বশেষ ‘ফ্ল্যাশপয়েন্ট’ এ পরিণত হয়েছে। ইসরাইল এখানে একটি ইহুদি বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। বহু মানুষের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে এই নতুন বসতির জন্য। অনুমোদন ছাড়াই নতুন ইসরাইলি ফাঁড়িও স্থাপন করা হয়েছে।

বাত্তিরকে ঘিরে বসতি স্থাপনকারীদের পরিকল্পনা নিয়ে ইউনেস্কো উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই জাতীয় স্থাপনাকে অবৈধ হিসেবে দেখা হলেও ইসরাইল এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে। সম্প্রতি ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা প্রধান রোনেন বার মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে সতর্ক করে লিখেছিলেন, পশ্চিম তীরের ইহুদি চরমপন্থীরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে এবং দেশের অবর্ণনীয় ক্ষতি করছে। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই দ্রুত বসতি স্থাপন হচ্ছে অধিকৃত পশ্চিম তীরে। এ পরিবর্তন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে বাধা দিবে বলে ইসরাইল সরকারে থাকা চরমপন্থীরা গর্ব করে মন্তব্য করেন।

পর্যবেক্ষণকারী ইসরাইলি সংস্থা ‘পিস নাও’-এর ইয়োনাতান মিজরাহি বসতি স্থাপনের বিষয়ে বলেছেন, পশ্চিম তীরের চরমপন্থি ইহুদিরা ইতোমধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসান ঘটানোর বিষয়টিকেও কঠিন করে তুলেছে। তিনি মনে করেন, ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরাইলি সমাজে ক্রোধ ও ভয়ের মিশ্রণ রয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের জুন মাসের একটি সমীক্ষা বলছে, ৩৫ শতাংশ ইসরাইলি মনে করেন, বসতি স্থাপনের কারণে ইসরাইলের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে ইসরাইলের সেনাপ্রধান চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি আগামী ডিসেম্বর নাগাদ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এমন তথ্য জানিয়েছে গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি। 
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরাইলে হামলা চালায়। কিন্তু ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী ওই হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল। সে ঘটনার ব্যর্থতার দায়ে ইসরাইলি সেনাপ্রধান পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ইউনিট ৮২০০-এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়োসি সারিয়েল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। নেতানিয়াহুর কাছের বলয়ের একের পর এক শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চরম বিপাকে পড়েছেন। গাজায় বন্দি ইসরাইলি সেনার এক ভাই বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, যতদিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকবেন, এই যুদ্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে থাকবে এবং কোনো জিম্মি চুক্তি হবে না। জিম্মিদের বাঁচাতে নেতানিয়াহুকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। গত মে মাসে নেতানিয়াহু গাজার জন্য যুদ্ধপরবর্তী একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এতে তিনটি পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। এটি অনির্দিষ্ট বিজয়ের তারিখ থেকে শুরু হবে, চলবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত।

রোডম্যাপে বলা হয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি দখলদারিত্বে, আরব রাষ্ট্রগুলো তথা সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, জর্দান ও মরক্কোর তদারকিতে পরিচারিত হবে। ওই পরিকল্পনায় বন্দর, সৌর জ¦ালানি, বৈদ্যুতিক গাড়ি কারখানায় বিনিয়োগ এবং গাজায় সদ্য আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থেকে উপকৃত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনিরা নজিরবিহীন সমৃদ্ধি উপভোগ করবে বলে তিনি দাবি করেন। এর জবাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণের আশা ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নকারী ফিলিস্তিন সরকার গঠন ছাড়া আমিরাত যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা পরিকল্পনায় ইহুদি দেশটিকে সহায়তা করা হবে না। 
এদিকে সৌদি আরবও সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইসরাইলকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত দিয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি গোয়েন্দা পরিষেবার সাবেক প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইসরাইল ও সৌদি আরবের মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে আগ্রহী। কিন্তু রিয়াদের অবস্থান হলো যদি এমন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় যার অস্তিত্ব ইসরাইল স্বীকার করে, তাহলে আমরা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে কথা শুরু করতে পারব।

তিনি ১৯৮১ সালের কিং ফাহাদ শান্তি পরিকল্পনা এবং বাদশাহ আবদুল্লাহ কর্তৃক প্রস্তাবিত ২০০২ আরব শান্তি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, সৌদি আরব সবসময় এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে এসেছে। সৌদি আরব চায় ১৯৬৭ সালে সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেম যুক্ত করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। ৭ অক্টোবরের আগে ইসরাইলিরা নেতানিয়াহুর গণতন্ত্রবিরোধী সাংবিধানিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নয় মাস বিক্ষোভ করেছিল।

এ সময় এমন একটি আশা জনমনে জেগেছিল যে, যুদ্ধ ও নেতানিয়াহুর অযোগ্যতা বৃহৎ আকারে বিক্ষোভ উস্কে দেবে। নেতানিয়াহু যে রাজনৈতিকভাবে মৃত্যুর দ্বারে উপনীত হয়েছেন-তার প্রমাণ রয়েছে। সম্প্রতি কয়েকবার ভোট গণনায় পরিলক্ষিত হয়েছে, ৭০ শতাংশ ইসরাইলি তার পদত্যাগ চায়। মার্কিন প্রশাসন, জিম্মিদের ভাগ্য নিয়ে নেতানিয়াহুর অব্যবস্থাপনা প্রভৃতি কারণে একটি পরিবর্তন আনতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।


লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×