ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

ডিম এখন বিলাসী পণ্য

ড. মিহির কুমার রায়

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

ডিম এখন বিলাসী পণ্য

ডিম এখন বিলাসী পণ্য

অতিমূল্যের কারণে চট্টগ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষের পাত থেকে অনেকটাই উঠে গেছে মাছ-মাংস। আমিষের চাহিদা পূরণে ভরসা ছিল ডিম। সেখানেও চোখ পড়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের। নগরীতে একটি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ১৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা এর জন্য সরবরাহ ঘাটতির কথা বললেও অনুসন্ধানে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডিম দুই-এক দিন মজুত করে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু একটি সিন্ডিকেট।

ব্যবসায়ী,  সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের অধিকাংশ ডিম আসে টাঙ্গাইল থেকে। তবে ওই ডিম সরাসরি চট্টগ্রামের পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে যায় না। কিছু মধ্যস্বত্বভোগী, ডিলার ও পাইকার ডিমগুলো এক-দুই দিন মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট দেখায়। এর পর ডিমপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ পয়সা যোগ করে পাইকারি বাজারে পাঠায়। আড়তদাররা বাড়ায় আরও ২০ পয়সা থেকে এক টাকা পর্যন্ত। এর পর খুচরা পর্যায়ে গিয়ে যোগ হয় আরও ১ টাকার মতো।

এ ছাড়াও টাঙ্গাইলের বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফোনে ফোনে চট্টগ্রামে ডিমের বাড়তি দাম নির্ধারণ করে দেয়। কেনা ও বেচা দাম গোপন করতে ব্যবসায়ীরা কোনো রসিদ রাখে না। মূলত এভাবে কারসাজি করে চট্টগ্রামে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে চক্রটি।  কিছু ব্যবসায়ীর এই অতি মুনাফার জন্য ভুগতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এক মাসের ব্যবধানে তাদের ডিমপ্রতি বেশি গুনতে হচ্ছে প্রায় চার টাকা। গত মে মাসের শেষ দিকে নগরীতে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। পিস হিসেবে দাম পড়ছিল ১০ থেকে সাড়ে ১০ টাকা।

তবে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে সেই ডিম এখন প্রায় ১৪ টাকায় তোলা হয়েছে। নগরীর দিনমজুর মোবারক হোসেন বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। মাছ, মাংস তো এখন সপ্তাহে একবার খাওয়াও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভরসা ছিল ডিম। সেই ডিমের দামও নাগালের বাইরে। চাকরিজীবী আকলিমা জান্নাত বলেন, যে যেভাবে পারছে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ডিমের দাম বাড়ায় সন্তানদের এক ডিম ভাগ করে খাওয়াতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ২০ থেকে ২৫ লাখ পিস। ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কিছুদিন ধরে ডিম আসছে ১৫ লাখের মতো। তবে প্রশাসন বলছে, যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে সরবরাহ স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ লাখের ওপরে ডিম আসছে। এর ৮০ শতাংশ আসছে টাঙ্গাইল থেকে। চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী বাজারের অন্যতম বৃহৎ ডিম বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান জান্নাত পোলট্রি। প্রতিষ্ঠানটি টাঙ্গাইল থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সা দরে প্রতিটি ডিম ক্রয় করছে। তবে একই ডিম পাইকারি পর্যায়ে তারা বিক্রি করছে ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ৫০ পয়সায়। এই হিসাবে তারা প্রতি পিস ডিমে লাভ করছে এক টাকার বেশি।

এই ডিমই ভোক্তার কাছে যেতে কয়েক হাত ঘুরে ১৪ টাকা হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির এক বিক্রয় ব্যবস্থাপকের দাবি, টাঙ্গাইল থেকে ডিম আনলে তারা কোনো রসিদ দেয় না। ফোনে ফোনে তারা দাম নির্ধারণ করে দেয়। এর সঙ্গে তারা কিছু লাভ রেখে পাইকারি পর্যায়ে ডিম বিক্রি করেন। চট্টগ্রামে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মূলত নগরের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বাজার ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের ২০ ব্যবসায়ী। টাঙ্গাইল থেকে আনা ডিম মূলত এই দুই বাজারেই আসে। তাদের সঙ্গে জড়িত টাঙ্গাইল ও গাজীপুরের কিছু ব্যবসায়ী। 
বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চাহিদা বাড়েনি, উৎপাদনও কমেনি, তবু ডিমের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। খামারে একটি ডিমের উৎপাদন ব্যয় পড়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে এই ডিম কোনোভাবেই ১২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ গত ১০ দিনের বেশি সময় ধরে একটি ডিম প্রায় ১৪ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ ডিমপ্রতি ব্যবসায়ীরা ৩ টাকা বেশি লাভ করেছে। একদিনে দেশে ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। প্রতি ডিমে ৩ টাকা বেশি মুনাফা করায় ১২ কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে।

গত ১০ দিনে ক্রেতার পকেট কেটে ডিম সিন্ডিকেট লোপাট করেছে ১২০ কোটি টাকা। এমন চিত্র আমাদের শঙ্কিত করে। ডিম ছাড়াও বাজারে চাল, পেঁয়াজ, সবজি, মাছÑ সব কিছুর দাম বেশি। প্রায় ২ বছর ধরে বাজারের উচ্চমূল্য সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। এর মধ্যেই দফায় দফায় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে সুযোগ নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজার মনিটরিং না থাকা এমন অবস্থার জন্য দায়ী মনে করছে মানুষ। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন নয়। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে জানা গেছে, ঢাকার বাজারে ফার্মের মুরগির এক হালি বাদামি ডিমের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এক মাস আগের তুলনায় এই দর ২৮ শতাংশ বেশি। এক বছর আগের তুলনায় তা ৫৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, দেশি হাঁস ও মুরগির ডিমের দর উঠেছে প্রতি হালি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। দেশের ইতিহাসে ডিমের ডজন কখনোই দেড়শ’ টাকা স্পর্শ করেনি। গরিবের ‘মাংস’ হিসেবে খ্যাত খাদ্যপণ্যটির প্রতি ডজন কিনতে এখন এলাকাভেদে ক্রেতার খরচ পড়ছে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা। তবে এক হালি কিনলে রাখা হচ্ছে ৫৫ টাকা। 
টাঙ্গাইলের অন্যতম ব্রয়লার মুরগি ও ডিম উৎপাদনকারী সোহেল রানা বলেন, মুরগি পালনে মোট খরচের ৭৫ শতাংশই ব্যয় হয় খাবারের পেছনে। সম্প্রতি খাবারের দাম আরও বেড়েছে। এ ছাড়া অনেক খামারি লোকসানে পড়ে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। কেউ কেউ ব্যবসা ছেড়েও দিয়েছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এত দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বাড়তি দরের কতটুকু পাচ্ছেন খামারিরা, সেটাও দেখতে হবে। খামার থেকে খুচরা পর্যায়ে যাওয়া পর্যন্ত যে মধ্যস্বত্বভোগীরা রয়েছেন, তাঁরাও এর থেকে মুনাফা নিচ্ছেন।

দাম বাড়ার পেছনে এটিও একটি কারণ। আমদানি করে ডিমের দাম কমাতে চাইলে উলটো দাম বাড়বে। তখন ১২ টাকার ডিম ২০ টাকায় খেতে হবে। এ কথা বলেছেন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)-এর সহসভাপতি আনোয়ারুল হক। রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) আয়োজিত কর্মশালায় এ কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘মুরগির ফিডের দাম না কমালে ডিমের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব না।’ ওই কর্মশালায় বক্তারা বলেন, পোলট্রি শিল্পে যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, এর ৮৫ শতাংশই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে।
 সম্প্রতি ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলারের দাম ১১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের কিনতে হচ্ছে ১২২ টাকায়। ফলে ডলারের দাম না কমলে ডিম ও পোলট্রি মুরগির দাম কমানো কঠিন। তারা বলেন, উৎপাদন খরচের বিপরীতে ন্যায্য দাম না পাওয়া, অপপ্রচার এবং বাজার তদারকি সংন্থার চাপে প্রান্তিক খামারিরা দিন দিন আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ছেন। ইতোমধ্যে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কমেছে উৎপাদন।

এ অবস্থা চলতে থাকলে ডিম-মাংসের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ২০২২ ও ২০২৩ সালের বেশিরভাগ সময় খামারিরা লোকসান দিয়েছে। উৎপাদন খরচের চেয়েও কম মূল্যে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়েও খামারিরা চেষ্টা করেছে উৎপাদন সচল রাখতে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা অন্যায্য মুনাফা করেছে, অথচ খড়্গ নেমেছে উৎপাদকদের ওপর। তিনি বলেন, ‘এভাবে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে না। খামারিরা লাভ করতে পারলে যারা সরে গেছে তারা আবারও ফিরে আসবে। উৎপাদন বাড়লে বাজারও স্থিতিশীল হবে।

কাজী জাহিদ হাসান বলেন, ‘ডিম-মুরগির বাজারে সিন্ডিকেটের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটি অপপ্রচার। ‘প্রান্তিক খামারি’ বনাম ‘করপোরেট খামারি’র বিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমেও দেশীয় খামারি ও উদ্যোক্তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ডিম-মুরগি আমদানি করা হলে তো দেশেরই ক্ষতি হবে।’ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ভুট্টা, সয়াবিন মিলসহ ফিড তৈরির অন্যান্য উপকরণ এবং ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এনওসি দিয়ে আমদানি করা ফিড গ্রেড পণ্যকেও ফুড গ্রেড লেবেল দিয়ে উচ্চহারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে।’

আফতাব আলম বলেন, ‘প্রায়ই খামার ও খুচরা বাজারের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক লক্ষ্য করা যাছ। ১০ দশমিক ৭৫ টাকায় উৎপাদিত ডিমের সঙ্গে ২ টাকা যোগ করলেও খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম ১২ দশমিক ৭৫ টাকার বেশি হওয়া সমীচীন নয়। অথচ বাজারে তা ক্ষেত্রবিশেষে ১৪ টাকা এমনকি কোথাও কোথাও ১৭ টাকা পর্যন্ত উঠতে দেখা গেছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এমন কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যারা সরকারের চেয়েও ক্ষমতাধর। সরকারকে যারা ভয় করে না, উল্টো ভয় দেখায়। কোনোভাবেই কোনোকিছুতেই সরকার ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। যা হোক, শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থতায় বেড়ে ওঠার জন্য ডিম, দুধ তথা পুষ্টিকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে সোশ্যাল ও কমার্শিয়াল বিজনেসে সেই সত্য ঘুরেফিরে বলা হয়েছে, হচ্ছে। পুষ্টির জন্য বেশ ক’টা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।

এখন সুন্দর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কথা কে ভাবছে? ভাবতে সাহস পাচ্ছে? কিভাবেই বা পুষ্টিকর খাবার খাবে শিশুরা? একদিকে বলা হচ্ছে শিশুকে, গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে, অপরদিকে সেসব খাবার থাকছে, চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তাহলে? সবকিছুই তো বুলিসর্বস্ব হয়ে পড়ছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আমদানির আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি বেনাপোল দিয়ে এপারে এসেছে ভারত থেকে আমদানিকৃত কয়েক লাখ ডিম। পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন নয়। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সব মিলে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থো। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংন্থাগুলো দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বাজারে এরই মধ্যে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে তাদের অভিযানেও ফেরেনি স্বস্তি। জরিমানা করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ডিমের বাজার।

আমাদের আগের অভিজ্ঞতায় আছে, এসব ব্যবস্থয় বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। এখনো বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছেÑ এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘœ রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

এর বাইরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে। জনস্বার্থে সিন্ডিকেট ভাঙতেই হবে। ডিমের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষ। কারণ, ডিমের দামে মাছ বা মাংস কোনোটাই কেনা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ভরসা ডিম। কিন্তু এখন তাও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, কেন্দ্র থেকে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষেত্র পর্যন্ত ব্যবস্থাপনাও নজরদারির আওতায় আনা জরুরি।

একই সঙ্গে ডিমসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘœ রাখার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। দেশ জনগণ ছাড়া চলে না। সেই জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে জনগণের জীবন বাঁচে কী করে? আর্থিক স্বল্পতার কারণে মাছ, মাংস সাধারণ মানুষ কিনতে সাহস পায় না। সেখানে বিকল্প কিছু খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডিম হাতছাড়া হলে তার বিকল্প পরামর্শও হয়তো কেউ দিয়ে ফেলবে। এত বিকল্প ভাবনায় জীবন না জানি কখন বিকল হয়ে যায়!

লেখক : গবেষক ও অর্থনীতিবিদ

×