ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম

আখেরি নবীর ওপর বিশ্বাস

মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

আখেরি নবীর ওপর বিশ্বাস

প্রসঙ্গ ইসলাম

আল্লাহতায়ালা বলেন : বস্তুত ‘আমি একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়Ñ।’ অতএব  (হে প্রিয় নবী স.) আপনার পালনকর্তার কসম! সে লোক ইমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে স্ষ্টৃ বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে-(৪ঃ৬৪,৬৫)।
সূরা আনফালের ২০ ও ২১ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, তাঁদের আদেশ শ্রবনের পর তা অমান্য করে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করোনা। তাদের মতো হয়ো না যারা বলে-আমরা শুনেছি কিন্তু কার্যত তারা শোনে না।’ অনুরূপ নির্দেশ বর্ণিত হয়েছে সূরা নিসার ৫৯ নং-আয়াতে। সুরাতুল মুজাদালার ৯ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে : ‘হে ইমানদার লোকেরা! তোমরা যখন পরস্পর পরামর্শে মিলিত হও, তখন গুনাহের কাজ, সীমা লঙ্ঘনমূলক ও রাসূলের নাফরমানী করার বিষয়ে পরামর্শ করো না। বরং পরামর্শ করো নেক কাজ ও খোদাভীতিমূলক কাজ সম্পর্কে। আর খোদাকে ভয় করে চলো, যার নিকট তোমাদের সকলকেই একত্রিত করা হবে।’
অন্যত্র রাসূলের আদেশের যারা বিরোধিতা করে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের ওপর কোনো বিপদ মুসিবত আসতে পারে অথবা কোনো পীড়াদায়ক আজাবে তারা  নিক্ষিপ্ত হতে পারে।’-(২৪ঃ৬৩)।
কোন বিষয়ে আল্লাহ ও রাসূলের (স.) ফয়সালা ও ফরমান আসার পর তা মানা না মানার ব্যাপারে মু’মিন পুরুষ ও স্ত্রীলোকের কোনো এখতিয়ারই থাকতে পারে না। যে লোক আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে ইসলাম হতে বহুদূরে চলে যায়।-(আল আহযাব-৩৬)।
মিকদাম ইবনে মা’দি কারাব (রা.) বলেছেন, নবী করীম (স.) এরশাদ করেছেন: সাবধান, আমাকে কুরআন দেওয়া হয়েছে এবং সে সঙ্গে ওটারই মতো আরেকটি জিনিস (আল হাদিস) সাবধান, সম্ভবত কোনো সুখী ব্যক্তি তার বড় মানুষীর আসনে উপবিষ্ট হয়ে বলতে শুরু করবে যে, তোমরা কেবল এ কুরআনকেই গ্রহণ কর, এতে যা হালাল দেখবে তাকেই হালাল এবং যাকে হারাম দেখবে তাকেই হারাম মনে করবে। অথচ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, রাসূল যা হারাম করেছেন তা খোদার ঘোষিত হারামের মতোই মাননীয়।-(ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)।
উপরোক্ত কুরআন-হাদিসের উদ্ধৃতিসমূহে রসূলে করীম (স.)- এর মহত্ত্ব, সুউচ্চ মর্যাদার বিষয় প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার আনুগত্যেও অপরিহার্যতার বিষয়টি সবিস্তারে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সূরা নিসা’র ৬৫ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা কসম খেয়ে বলেছেন যে, কোনো মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন কিংবা মুসলমান হতে পারে না যতক্ষণ সে ধীরস্থির মস্তিষ্কে মহানবী (স.)- কে এভাবে স্বীকার করে নেবে যাতে তার কোনো সিদ্ধান্তেই মনে কোনো সংকীর্ণতা না থাকে।
মহানবী হযরত রাসূলে মাকবুল (স.) একজন মহান আখেরি পয়গাম্বর হিসেবে গোটা উম্মতের শাসক এবং যে কোনো বিবাদের মীমাংসার জিম্মাদার। তাঁর শাসন ও সিদ্ধান্ত অপর কাউকে বিচারক সাব্যস্ত করার ওপর নির্ভরশীল নয়। তাঁর মীমাংসাই চূড়ান্ত এবং তা অকপটে মেনে নেওয়া ফরজ।
তাফসীর বিশারদগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, কুরআনের বাণীসমূহের ওপর আমল করা আঁ-হযরতের (স.) যুগের সঙ্গে সীমিত নয়। তাঁর তিরোধানের পর তাঁর পবিত্র শরীয়তের মীমাংসাই হলো তার মীমাংসা। কাজেই এ নির্দেশটি কিয়ামত পর্যন্ত তেমনিভাবে বলবৎ থাকবে; যেমন ছিল তার যুগে। তখন যেমন সরাসরি  (কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তকল্পে) তার কাছে উপস্থিত করা হতো, তেমনি তার পরে তার শরীয়তের মীমাংসা নিতে হবে। আর এটা প্রকৃতপক্ষে তাঁরই অনুসরণ। (বাহরে মুহিত, মা’আরিফুল কুরআন)।

উদ্বৃত্ত বাণীগুলো থেকে একথাও স্পষ্টভাবে জানা গেল যে, যে কাজ বা বিষয় মহানবী (স.) কর্তৃক কথা বা কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত, তা সম্পাদন করতে গিয়ে মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা অনুভব করাও ইমানের দুর্বলতার লক্ষণ। উদাহারণত যে ক্ষেত্রে শরীয়ত তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছে; সে ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করতে যদি কেউ সম্মত না হয় তবে একে পরহেজগারী বলে মনে করা যাবে না, বরং একান্তই মানসিক ব্যাধি।
রাসূলে কারীম (স.) অপেক্ষা কেউ বেশি পরহেজগার হতে পারে না। তিনি অতি সতর্কতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কল্যাণের দিক বিবেচনা করে শরীয়তের বিধি-বিধানগুলো সাজিয়েছেন। সুতরাং তার আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর হুকুমের তাঁবেদারি করা মোটেই সম্ভব নয়। সিরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত একটি সংলাপ থেকেও এর একটি যৌক্তিক উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়।
ইমরান ইবনে হুসাইনের (রা.) মজলিশে একজন লোক বলল : ‘লা-তুহাদ্দিসুনা ইল্লা বিল কুরআন- আপনি আমাদের নিকট কোরআন ব্যতীত অন্য কিছু বর্ণনা করবেন না।’ তখন হযরত ইমরান সে ব্যক্তিকে ডেকে বললেন : তুমি কি চিন্তা করে দেখেছ, তোমাকে ও তোমার সঙ্গী সাথীদের যদি কেবলমাত্র কুরআনের উপরই নির্ভর করে দেওয়া হয় তাহলে কি তুমি কুরআনে জোহরের চার রাকাত ও মাগরিবের তিন রাকাত নামাজের উল্লেখ পাবে? (মোটেই না)।
সুতরাং মহানবীর (স.) ব্যাখ্যা ও দিকনির্দেশনা ছাড়া সামনে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয় এবং তাঁর আনুগত্য উপেক্ষা করার কোনো সামান্যতম সুযোগও মু’মিনের নেই। ফার্সি কবির ভাষায়: 
‘বাদ আজ খোদা বুজুর্গ তুয়ী কিসসা-ইমুখতাসার।’
 অর্থাৎ: পরওয়ার দিগার খোদা তায়ালার পরপরই একমাত্র তারই বন্দনাই শ্রেষ্ঠ বলবৎ।

লেখক : অধ্যাপক, টিভি উপস্থাপক ও 
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খতিব

[email protected]

×