ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

দেশীয় ট্রাফিক সিগন্যাল

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

দেশীয় ট্রাফিক সিগন্যাল

সম্পাদকীয়

ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে রাজধানীর ২২টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রযুক্তি তৈরি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। শিক্ষা ভবন সংলগ্ন মোড় থেকে ফার্মগেট-মহাখালী হয়ে উত্তরার আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কে স্থাপন করা হবে এই সিগন্যাল। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার যানজট পরিস্থিতির উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের  প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বুয়েটের দুজন পরিবহন-বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ও অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ঢাকার যানজট নিরসনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেছেন তারা। সভায় দেশীয় প্রযুক্তিতে বুয়েটের তৈরি ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা প্রদর্শন করা হয়। এটি সনাতন (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ সংকেতবাতি (লাল, সবুজ ও হলুদ) জ্বলা-নেভার বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে এ পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয়তার (অটোমেশন) দিকে উন্নীত করা হবে। দেশীয় প্রযুক্তির সিগন্যাল বাতি সম্পর্কে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘অতীতে ইউরোপ কিংবা অন্যান্য দেশের উন্নত প্রযুক্তি বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়েছে।

এসব প্রযুক্তির জটিলতার কারণে কোনো পদ্ধতিই সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়নি। এটা হয়েছে আমাদের দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা, সড়ক ব্যবহারকারীÑ কোনোটারই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে মিল না থাকায়।’ খুবই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো সহায়ক বা বিকল্প (ব্যাকআপ সাপোর্ট ) ব্যবস্থা থাকে না। অথচ ট্রাফিক সিগন্যাল ২৪ ঘণ্টাই প্রয়োজন হয়। তাই এক ঘণ্টার জন্যও এই ব্যবস্থা ব্যাহত হলে পুরো ব্যবস্থাপনাই অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাকআপ সাপোর্ট রাখতেই দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানী শহর ঢাকার প্রধান সমস্যা যানজট। ঢাকায় নিয়মিত গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি রাস্তার সংখ্যা। আবার বিদ্যমান রাস্তার অধিকাংশই সঙ্কীর্ণ। নেই গাড়ি পার্কিংয়ের যথেষ্ট জায়গা। ফলে সৃষ্ট যানজটে শুধু ভোগান্তিই নয়, বরং নষ্ট করছে সহস্রাধিক কর্মঘণ্টাও। শুধু ঢাকা নয়, বর্তমানে যানজটে পিষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরও। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় নানা সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি যথাযথভাবে। দুঃখের বিষয় হলো, সড়ক-মহাসড়কে নিয়মনীতি মানার তোয়াক্কা নেই। রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির ছড়াছড়ি এবং যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করাসহ বেশ কয়েকটি বিষয় যানজটের প্রধান কারণ।  
প্রায় অর্ধকোটি মানুষের বসবাস উপযোগী রাজধানী শহরে জনসংখ্যা ২ কোটির বেশি। জনসংখ্যার এই বাড়তি চাপসহ বহুবিধ কারণে বেহাল দশায় রয়েছে এই শহর। আয়তন এবং জনসংখ্যার তুলনায় ঢাকা কোনো মেগাসিটি থেকে কম নয়। যেখানে ঢাকার মোট সড়কের পরিমাণ দরকার ছিল আয়তনের প্রায় ২৫ শতাংশ, সেখানে আছে মাত্র ১০ শতাংশ। ফুটপাত দখল, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে অসচেতনতা, ঘুষ গ্রহণ এবং জনগণের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র হচ্ছে যানজট।

যানজট নিরসনে মেট্রোরেল, আন্ডারপাস, রোড ডিভাইডার, ওভারব্রিজ নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণ একান্ত জরুরি। যানজটের এই ভয়ংকর সমস্যার সমাধান হলে গতিশীল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।

×