ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

অর্থপাচার রোধে কমিশন

-

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

অর্থপাচার রোধে কমিশন

সম্পাদকীয়

রীতিমতো উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৪৬ বছরে (১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-২০১৯) দেশ থেকে মোট অর্থপাচারের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত ৩ শতাংশ। যেখানে প্রতিবছর বাজেটে ব্যয় সংকুলানের জন্য সরকারকে দেশী-বিদেশী বিপুল ঋণ নিতে হয়, সেখানে বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের সমপরিমাণ অর্থপাচার হয়ে যাওয়া জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জা ও উদ্বেগের।

এর ফলে, দেশে বহুমাত্রিক বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে এবং দারিদ্র্যের বিস্তার ঘটেছে। তদুপরি উৎসাহিত হয়েছে প্রায় সর্বত্র সর্বগ্রাসী দুর্নীতি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, অর্থনীতি সমিতি তারও প্রশংসা করেছে। এ বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের  প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।  টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছে, সমিতি মনে করে যেহেতু দুর্নীতি, কালোটাকা, অর্থপাচার দেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও উন্নত করার পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকে পরিণত হয়েছে, সেহেতু দুর্নীতি, কালোটাকা ও অর্থপাচার প্রতিরোধে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হতে পারে একটি উত্তম ব্যবস্থা। এটি হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ এবং কেবল জনগণের পক্ষে জবাবদিহি করবে রাষ্ট্রপতির কাছে। 
দেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল অর্থপাচার হচ্ছে বিদেশে। এটি এক রকম ওপেন সিক্রেট। তবে এর সঠিক পরিমাণ কত তা জানে না কেউ। সরকারও এ নিয়ে মুখ খুলতে চায় না সহজে। দুর্নীতি দমন কমিশন মাঝে মধ্যে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ আনলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণের অভাবে তা থেকে যায় অগোচরে। সাবেক এক অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, বিদেশে অর্থপাচারকারীদের নাম ও তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কার্যত কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রায় কোনো নজির নেই বললেই চলে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানির মূল্য কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ তো আছেই। এর বাইরে রয়েছে হুন্ডি ব্যবসায়ী, সোনা ও মাদক চোরাচালান, মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশুপাচার ইত্যাদি। 
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অর্থপাচারের পরিমাণ বাড়ছে। গত ছয় বছরে (২০০৯-২০১৫) বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা বা ৪৯৬৫ কোটি ডলার। এই হিসেবে গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৮ শতাংশই ছিল ভুয়া। ২০১৫ সালের পর সংস্থাটিকে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর কোনো তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ। তবে বিদেশে অর্থপাচারের পরিমাণ যে বেড়েছে, সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।

বিদেশে যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতেই অর্থপাচার করা হোক না কেন, সেদিকে নজরদারি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দুর্নীতি দমন কমিশনও এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। বিদেশে অর্থপাচার বন্ধ হলে দেশের সার্বিক উন্নয়নসহ বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য হ্রাস ইত্যাদি কমে আসবে নিঃসন্দেহে।

×