ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

নিরাপদ সড়ক

-

প্রকাশিত: ২০:২৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

নিরাপদ সড়ক

সম্পাদকীয়

দেশে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। ঝরে পড়ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। অনেকেই বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব নিয়ে কষ্টে ভুগছেন সারাজীবন। রবিবার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৫৯৮ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। খোদ রাজধানীর সড়কও নিরাপদ নয়।

গত সাড়ে ৫ বছরে রাজধানীতে ১ হাজার ২২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬১ জন নিহত হয়েছেন। বিভাগের দিক দিয়ে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনে পণ্যবাহী যানের সংখ্যা বেশি। পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তরুণরা আবেগের বশবর্তী হয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তাই অভিভাবকদের সন্তানদের মোটরসাইকেল দেওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। অথচ সেই দুর্ঘটনাই ঘটছে অহরহ, অবিরত। দুর্ঘটনা রোধে আইনকানুন ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকলেও তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সড়কে আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না। এজন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দরকার। নিরাপদ সড়কের সুব্যবস্থা ও সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা প্রতিরোধ করতে রাস্তায় বাঁক কমানো, নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা, লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা, চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা জরুরি। সেইসঙ্গে চালক ও যাত্রীদের সিট বেল্ট বাঁধা এবং নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য আরও মনোযোগী হওয়া চাই। 

সড়ক পরিবহন আইনের  পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়াও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং দক্ষ চালক তৈরির পাশাপাশি ট্রাফিক আইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা আবশ্যক। অনেকক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অসতর্কতা এবং অসচেতনতার জন্যও ঘটে সড়ক দুর্ঘটনা। তাই শুধু আইনের বাস্তবায়ন নয়, নাগরিকদের সচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষ, চালক, শ্রমিক ও যাত্রী সকলের সচেতনতা কাম্য। একথা ভুলে গেলে চলবে না, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

সড়ক নিরাপদ করতে একক কোনো কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা নয়, সকল অংশীজন এবং সরকারী উদ্যোগসমূহের কার্যকর সমন্বয় জরুরি। আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি সড়ক ব্যবহারকারী। তাই নিজে সচেতন হই, অপরকে সচেতন করি এবং বিদ্যমান ট্রাফিক আইন মেনে চলি। তবেই নিশ্চিত হতে পারে সড়কের নিরাপত্তা। পূরণ হতে পারে জনগণের জন্য নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা।

×