ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

শব্দদূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

-

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২২ অক্টোবর ২০২৪

শব্দদূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

সম্পাদকীয়

আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে নানা মাত্রায় শব্দদূষণ বাড়ছে সারাদেশে। বর্তমানে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জও শব্দদূষণের আওতার বাইরে নয়। তবে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ শহরাঞ্চল এবং শিল্পাঞ্চলে শব্দদূষণের মাত্রা অনেক বেশি, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য সৃষ্টি করছে নানা মাত্রিক ঝুঁকি, এমনকি রোগ-ব্যাধি পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ শহরের অন্যতম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় নিরাপদ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবল। বাণিজ্যিক ও যানজটপ্রবণ এলাকায় এই মাত্রা ৭০ ডেসিবল নির্ধারিত।

সেখানে ঢাকায় গড় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবল- এমনটাই জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক-কান ও গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যানজট, গাড়ির হর্ন, শিল্পকারখানা, রাজনৈতিক সমাবেশ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি থেকেও উচ্চমাত্রার শব্দ নির্গত হয়ে থাকে। ঢাকা শহরে প্রায় ১ কোটি মানুষ শব্দদূষণের কারণে রয়েছেন সমূহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। অন্য এক গবেষণায় জানা যায়, প্রায় ৯১ শতাংশ মানুষ তাদের আশপাশে শব্দদূষণের সমস্যা অনুভব করেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শব্দদূষণের কারণে কানে সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুমের ব্যাঘাত, হার্টে সমস্যা ইত্যাদি তো হচ্ছেই।

নিয়মিত শব্দদূষণে এক সময় এমনকি বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, নদীদূষণ, পরিবেশদূষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে সরকারের আইন রয়েছে। বাস্তবে এসব আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত সীমিত অথবা নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে সার্বিক দূষণ প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি ও অপরিহার্য। 

শব্দদূষণ রাজধানী  ঢাকার অন্যতম একটি সমস্যা। সেসব বিবেচনায় রেখে পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকাকে হর্নমুক্ত তথা শব্দদূষণমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আপাতত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যেমনÑ হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সচিবালয় এলাকায় শব্দদূষণ নিষিদ্ধ করা হবে। পরে পুরো ঢাকা শহর ও বিভাগীয় শহরে শব্দদূষণ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ কথা জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন কিলোমিটার এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে।

সেখানে হর্ন বাজালে কারাদ- ও জরিমানা হতে পারে। যানবাহনের চালক ও সহকারী এবং জনসাধারণকে শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে। এরপর হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর করা হবে জরিমানার বিধান। 
শব্দদূষণ এক ধরনের মারাত্মক পরিবেশ দূষণ। অনেক পরিবেশবাদী বাংলাদেশের শব্দদূষণের বর্তমান পর্যায়কে ‘শব্দসন্ত্রাস’ নামে অভিহিত করেছেন। এই ‘শব্দসন্ত্রাস’ মাথাব্যথার কারণ। বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা (২০০৬) অনুযায়ী নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, শিল্প এলাকা ও মিশ্র এলাকাÑ এই পাঁচটি জোনে দিন ও রাতে আলাদা করে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা আছে। সেক্ষেত্রে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ও জরিমানা বিধানের আইন শুধু করলেই হবে না, কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করে তা বাস্তবায়নের দাবি রাখে।

×