ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

পল্লী বিদ্যুতের সেবা

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২১ অক্টোবর ২০২৪

পল্লী বিদ্যুতের সেবা

সম্পাদকীয়

দেশের পল্লী বিদ্যুতের সেবা মূলত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছায়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে সব লাইন নির্মাণ এবং মালামাল ক্রয় ও সরবরাহ করা হয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সবচেয়ে বড় কাজ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন সংযোগ দেওয়া এবং প্রাপ্ত অভিযোগের সমাধান। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে ৮০টি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো (পবিস) পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীনে পরিচালিত হলেও এতদিন নিজেদের আয়েই চলছিল। কিন্তু এখন থেকে আর এভাবে চলতে চাচ্ছেন না পবিসের কর্মীরা। তারা সরাসরি আরইবির কর্মী হিসেবে নিয়োগ চান। কিন্তু বিদ্যুৎ নীতিমালা অনুযায়ী আরইবি সেই প্রস্তাব মানতে সম্মত না হওয়ায় তৈরি হয়েছে বিরোধ। এই  বিরোধের জেরে গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্ল্যাকআউটসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন পবিসের কর্মীরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অসংখ্য গ্রাহক। দাবি আদায় না হলে ঢাকামুখী লং মার্চেরও হুমকি দিয়েছেন তারা।

আন্দোলনকারীদের দাবি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায়, সিস্টেমের সংস্কার দাবি করায়, শহর এবং গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসনের দাবি তোলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আরইবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। ইতোমধ্যে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও দুদকে তলব করা হয়েছে। 
আন্দোলনের জেরে বিদ্যুত সেবা বিঘিœত হওয়ার বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও এই বিরোধ নিষ্পত্তিতে একটি কমিটি গঠন করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বিদ্যুত খাতের এমন পরিস্থিতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে বিদ্যুৎ সেবা আরও বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া ঢালাও মামলা ও ইচ্ছেমতো আসামি করা হলে সংকট বাড়বে বৈ কমবে না।
বিদ্যুৎ একটি জরুরি সেবা। নিয়মিত এই সেবা পাওয়া গ্রাহকদের অধিকার। জনগুরুত্বপূর্ণ সেবার এই খাতটিকে অপরাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। ন্যায্য ও যৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও ভোক্তাদের জিম্মি করে আন্দোলনের নামে এই সেবা বন্ধ রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ও কাম্য নয়। উদ্বেগজনকও বলা যায়। জোর করে দাবি আদায়ের নামে জনগণকে জিম্মি করা হলে যৌক্তিক দাবির আন্দোলনও অনেক সময় অসাড় হতে বাধ্য। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবি থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনা, পদ্ধতিগত ও আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সেগুলোর সমাধান যুক্তিযুক্ত। তবে কেউ অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে, তাকে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে  অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।

×