ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

পোশাক শিল্পে নীতি সহায়তা

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২১ অক্টোবর ২০২৪

পোশাক শিল্পে নীতি সহায়তা

সম্পাদকীয়

দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাত বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, বিশেষ করে দেশব্যাপী ছাত্র জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানের পর। এ সময়ে জুলাই-সেপ্টেম্বরে রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যায়। কয়েকটি শিল্পকারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ফলশ্রুতিতে অন্তত ৩৯টি কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়। অনেক কারখানায় ছুটি তথা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ সময়ে পুলিশ-র‌্যাব-শিল্প পুলিশের অনুপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করাও ছিল দুঃসাধ্য।

পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে একে একে কারখানাগুলো খুলতে শুরু করে। তাই বলে শিল্পকারখানাগুলোর সমস্যা-সঙ্কট দূর হয়েছে, এমন কথা বলা যাবে না। পরিস্থিতি উত্তরণে এবং পোশাক শিল্প খাতের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদন সক্ষমতা ধরে রাখতে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএর) নেতৃবৃন্দ শনিবার আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ সময়ে অস্থিরতা ও অসন্তোষের কারণে দেশের পোশাক খাতের প্রায় ৪০ কোটি ডলারের রপ্তানি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। দেশে বিরাজমান অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে অন্তত ৫-৬ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয় এবং সেগুলো  চলে যায় অন্যান্য দেশে। বিজিএমইএর তথ্যানুসারে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাংলাদেশে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সেখানে ভারতের প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে গিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বোঝা যায় যে, রপ্তানি আদেশ চলে যাচ্ছে সেসব দেশে। এ অবস্থা উত্তরণে তৈরি পোশাক খাতে প্রণোদনা পুনর্বহালসহ ১৪ ধরনের সহায়তা দিতে তারা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। বিজিএমইএ বলেছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের কথা বলে পোশাক শিল্পের নগদ সহায়তার পরিমাণ কমানো হয়েছে। এ কারণে পোশাক শিল্পে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সে সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের যেসব উদ্যোক্তা প্রতিকূলতার জন্য টিকতে পারছেন না, তাদের জন্য নিরাপদ ‘এক্সিট পলিসি’ বা ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের শিল্পগুলোর জন্যও বিশেষ সহায়তা চেয়েছে বিজিএমইএ। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বিষয় সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে বলেই প্রত্যাশা। 
বাংলাদেশের পোশাক খাত রপ্তানিতে এখন পর্যন্ত শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারলেও, বর্তমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাও জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বের পোশাক রপ্তানিতে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এই খাতে জিডিপির অবদান ১০ দশমিক ৩৫ বেশি।

এই খাতে কর্মরত ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক, যাদের ৬০ শতাংশই নারী, তবে অধিকাংশই স্বল্প শিক্ষিত, নিরক্ষর ও অদক্ষ। বাস্তবে এই খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রযুক্তি বা অটোমেশনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। ফলে, পোশাক শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা বাড়ছেই। এর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা, জীবাশ্ব জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণপরবর্তী চ্যালেঞ্জ মেকাবিলা সর্বোপরি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয়করণের প্রভাব মোকাবিলা করাও আবশ্যক।

তদুপরি বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে কয়েকটি দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার হারাতে পারে। সেসব বিবেচনায় নতুন নতুন বাজার অন্বেষণ তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

×