ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

বিদায় সুজেয় শ্যাম

প্রকাশিত: ২১:০১, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

বিদায় সুজেয় শ্যাম

সম্পাদকীয়

চলে গেলেন দেশের সংগীত জগতের কিংবদন্তি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, খ্যাতিমান সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম। শরীরে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনিসহ নানা জটিল রোগ নিয়েই কাটছিল তার শেষ জীবন। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গুণী এই সংগীতজ্ঞের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের সংগীতাঙ্গনে। অগণিত মানুষের স্মৃতিচারণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক যেন হয়ে উঠেছে শোকবই। একাত্তরের সহযোদ্ধা, সহশিল্পী ও স্বজনদের শ্রদ্ধার ফুল আর রাষ্ট্রীয় সম্মানে  অভিসিক্ত হয়ে শেষ শয্যায় শায়িত হলেন তিনি। 
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুজেয় শ্যামের নাম। তিনি একাধারে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বাংলা সিনেমা, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন। জীবদ্দশায় কণ্ঠে তুলেছেন বহু কালজয়ী গান। একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন তিনি। তাছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নয়টি গানে সুর করেছিলেন, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি বাংলাদেশের যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যামের স্বাধীনতার জন্য যেমন অবদান আছে, তেমনি দেশের সংগীতেও তার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি চারবার অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২’ নামে আরেকটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনাও করেন এই শিল্পী। ‘টুনাটুনি অডিও’  নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সংগীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন এই গুণী শিল্পী। মঞ্চনাটকেও সংগীত পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সুজেয় শ্যামকে সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা একাডেমি পদক পান। বাংলা গানের অন্যতম দিকপাল ও মুক্তিযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের গানের কথা ও সুরে মুক্তিকামী মানুষ উদ্দীপ্ত হতেন, তাদেরই একজন একাত্তরের কণ্ঠসৈনিক তিনি। সুরস্রষ্টা হিসেবে তিনি অমর। দেশের মানুষ সুজেয় শ্যামকে হৃদয়ের গভীরে লালন করবে চিরদিন। জনকণ্ঠ পরিবার তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। আমরা তার শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।

×