ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

সিন্ডিকেট ভাঙার প্রত্যয় 

-

প্রকাশিত: ২১:০০, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

সিন্ডিকেট ভাঙার প্রত্যয় 

সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দ্রুত সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ভাঙার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সেটিকে স্বাগত জানাবে দেশবাসী। তিনি বলেন, দেশের জন্মলগ্ন থেকেই সিন্ডিকেট সমস্যা রয়েছে। ভোক্তাদের যাতে সিন্ডিকেটের ওপর নির্ভর করতে না হয়, সে জন্য উদ্যোক্তাদের নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রুত সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ভাঙা হবে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে তথ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব বলেছিলেন, দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। আমরা আপনাদের কাছে এ বিষয়ে সহায়তা চাই। যদি আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকে, কারা মূল্য কারসাজি করছে, মনোপলির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেÑ সে বিষয়ে সরকারকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন। সরকার অবশ্যই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, যে কোনো পর্যায়ে চাঁদাবাজি অপরাধ। পরিবহন ভাড়া কমানোর বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা ও কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে। 
দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে হলে পণ্যের অবাধ উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা চাই। অগ্রহণযোগ্য সিন্ডিকেট ব্যবস্থার কারণে বিভিন্ন দ্রব্যের উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হয়নি। বরং এককালের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় উপড়ে ফেলা হয়েছে। প্রতিস্থাপিত হয়েছে কিছু নীতিহীন ও কালো চশমার দৌরাত্ম্য। তারা উৎপাদনের উপকরণগুলোকে গ্রাস করেছে। তারপর প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম ইচ্ছামাফিক বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে মুরগির মাংস ও ডিম অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটিসহ অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামালসমূহ বিশেষভাবে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যে অসহায়ত্ব নেমে আসে, তা সরকারকে আমলে নিতে হবে। কারণ, ব্যবসা আর সিন্ডিকেট এক বিষয় নয়।
সিন্ডিকেট পুরোপুরি না ভাঙা পর্যন্ত আমাদের মনে রাখতে হবে, হতদরিদ্র তো বটেই, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও দুঃসহ অবস্থার মধ্যে আছেন। বিশেষ করে যারা সহায়তার জন্য অন্যের কাছে হাত বাড়াতে পারেন না লোকলজ্জার ভয়ে। ওএমএস বা খোলা বাজারে বিক্রির দোকান ও টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ট্রাক তাদের ভরসার জায়গা। তাই যত বেশি মানুষকে টিসিবির পণ্যের আওতায় আনা যায়, ততই মঙ্গল। এ জন্য টিসিবিকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।

বাজার সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় বলে জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব। তিনি বলেন, সমবায় পদ্ধতি এখনো দেশে চালু করা হয়নি। ৪-৫ হাত বদলে দাম বাড়ছে পণ্যের। তবে সমবায় পদ্ধতি অবলম্বন করলে বাজারে এই অস্থিরতা থাকত না। শ্রম উপদেষ্টার সদিচ্ছায় গৃহীত সক্রিয় উদ্যোগ সফল হোক, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে পণ্যমূল্য সহনীয় হোকÑ এমনটাই প্রত্যাশা।

×