ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

ক্ষুদ্রঋণ নয় ক্ষুদ্র অর্থায়ন

প্রকাশিত: ২১:১৪, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

ক্ষুদ্রঋণ নয় ক্ষুদ্র অর্থায়ন

সম্পাদকীয়

ক্ষুদ্রঋণ এমন এক আর্থিক সেবা, যা দ্বারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হয়। সাধারণত এই ঋণ প্রদান করা হয় নি¤œ আয়ের মানুষ ও বেকারদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরির উদ্দেশ্যে। ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণে অপারগ দরিদ্র অসহায়দের সেবায় এগিয়ে আসে বিভিন্ন এমএফআই (গঋও) বা মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন। সাধারণত সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে ক্ষুদ্রঋণ সংগঠনগুলো কাজ করে থাকে।

এই সংগঠনগুলো অলাভজনক কিংবা লাভজনক হতে পারে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা এমএফআইগুলো কাজ করে মূলত তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নয়নের ভারসাম্য রক্ষা করাই এর লক্ষ্য। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ পরিষেবা বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও ক্ষুদ্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদত্ত ক্ষুদ্র অর্থায়ন পরিষেবার প্রভাব ইতিবাচক।

যদিও অনেকের মতে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্রঋণ প্রধান হাতিয়ার হতে পারে না। দারিদ্র্য একটি কাঠামোগত সমস্যা এবং তার সমাধান কাঠামোগতভাবেই করা উত্তম। সেক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের মতো সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। মূলধন পাচার বন্ধ করা, বাণিজ্য চুক্তিগুলোর মাঝে সাম্যতা, শ্রম-অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর কাঠামোগত সংশোধন করাও জরুরি। 
সম্প্রতি দেশে পরিবর্তন করা হয়েছে ক্ষুদ্রঋণসংক্রান্ত আইন। আইনে ‘ক্ষুদ্রঋণ’ শব্দটিই আর থাকছে না। বদলে হচ্ছে ‘ক্ষুদ্র অর্থায়ন’। বিদ্যমান ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএ) রয়েছে, সেই নামেরও পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হতে যাচ্ছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে সংক্ষিপ্ত নাম আগেরটাই থাকছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ক্ষুদ্রঋণ আর আগের জায়গায় নেই, অনেক বড় হয়েছে। ধারণাটি এখন ক্ষুদ্র অর্থায়নের।

এ কারণেই প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আইন সংশোধনের। আইন সংশোধন খাতটির জন্য ইতিবাচক। অনেক গ্রাহক ঋণের জন্য ব্যাংকে যেতে পারেন না। তাই ক্ষুদ্রঋণের বদলে ক্ষুদ্র অর্থায়ন এখন বাস্তবতা। আবার সঞ্চয়কারীদের অর্থ বড় গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে ব্যাংক খাত এখন ভুগছে। সময় এসেছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন খাতটিকে ঢেলে সাজানোর। সেইসঙ্গে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাতটিকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করা আইন ও বিধিমালা পরিবর্তনের এ উদ্যোগ হচ্ছে ক্ষুদ্র অর্থায়নের চাহিদা বৃদ্ধির প্রতিফলন।

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার মধ্যে আটকে না থেকে এখন বহুমাত্রিক কাজ করছে। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এই উদ্যোগ অবহেলিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন এবং দেশের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের সুযোগ করে দেবে- এমনটাই প্রত্যাশা।

×