ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

বিদায় মতিয়া চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

বিদায় মতিয়া চৌধুরী

সম্পাদকীয়

চলে গেলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক মতিয়া চৌধুরী। পরিণত বয়সে প্রয়াত হলেও তাঁর প্রস্থান দেশের জন্য বড় ক্ষতি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদের বিদায়ে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠন। আমরা তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ বিদায় অভিবাদন। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। নারী জাগরণ ও নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকা অসামান্য।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের জন্ম পিরোজপুরে ১৯৪২ সালের ৩০ জুন। স্কুল জীবন শেষে ইডেন কলেজে  আইএ-তে ভর্তি হন এবং ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। পরে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকেই তিনি ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। ওই বছরেই তিনি সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

ষাটের দশকে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে তুমুল আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তাতে মতিয়া চৌধুরী অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন। সে সময় কয়েক দফায় কারাগারে যেতে হয়েছে তাঁকে। এর মধ্যে একবার টানা দু’বছর জেলে ছিলেন তিনি। ষাটের দশকেই দেশজুড়ে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি এবং গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের সঙ্গে না থাকলেও ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত ছয় দফার সমর্থনে ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিলেন মতিয়া চৌধুরী।

সততা ও সাদামাটা জীবনযাপন মতিয়া চৌধুরীকে গণমানুষের নেতায় পরিণত করেছিল। মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-১ আসন থেকে বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। এর পর ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের উপনেতা করা হয়েছিল তাঁকে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শেরপুরের সোহাগপুর নামক গ্রামের সব পুরুষকে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সোহাগপুর গ্রামের নাম প্রথমে বিধবাপাড়া, পরে বিধবাপল্লী রাখা হয়। ১৯৯১ সালে মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ওই গ্রামের বিধবাদের গল্প সবার সামনে তিনি তুলে ধরেন। পাঁচ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ওই গ্রামের বিধবা নারীদের নানাভাবে সাহায্য করতে শুরু করে। এর নেপথ্যে মতিয়া চৌধুরীর প্রত্যক্ষ ও বিশেষ অবদান ছিল।

একদিকে সব সংগ্রামে থাকা, অন্যদিকে সরকারে থেকে গণমানুষের স্বার্থে কাজ করার জন্য মতিয়া চৌধুরী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। নশ্বর দেহ লোকান্তরিত হয়, কিন্তু গুণীজন বেঁচে থাকেন তাঁর কর্মের মাঝে। অনুসরণীয় তাঁর আদর্শ প্রেরণা দেবে নতুন প্রজন্মকে। কর্মের মধ্য দিয়ে এদেশের সচেতন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন মতিয়া চৌধুরী। বাংলার প্রগতিশীল নারীসমাজ তাঁকে স্মরণ করবে গভীর শ্রদ্ধায়।

×