ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল

সম্পাদকীয়

এবারে এইচএসসি বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে কিছুটা বিলম্বে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও অভ্যুত্থান এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় এবারে অংশ নিয়েছিল ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯।

এবারে এইচএসসি পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করা হয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। উল্লেখ্য, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। ৭টি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এক পর্যায়ে তা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলসহ অটোপাসের দাবিতে গত ২০ আগস্ট সচিবালয়ের ভিতরে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ-অবরোধ করে।

পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ম্যাপিং বিষয়টি অবশ্য নতুন নয়। এর আগে করোনাকালেও পরীক্ষা দিতে না পারায় বিষয় ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
এই পদ্ধতিতে বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে। আর যে কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে হয়েছে মূল্যায়ন। তাতে দেখা যায় এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে। তবে ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ বেড়েছে। ঢাকাসহ সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমে বলেছেন, পাসের হার কমে যাওয়ার কারণ ইংরেজি বিষয়ের ফলের প্রভাব।

বাধ্যতামূলক ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার এবার অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় কম। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়েরও কিছু প্রভাব পড়েছে। এইচএসসিতে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ উভয় সূচকেই এবারেও ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। দুঃখজনক হলো, সার্বিক মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি থাকার পরেও ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। 
উল্লেখ্য, সূচি অনুযায়ী আরও ১৩ দিনের মোট ৬১টি পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। অটোপাসের দাবিতে শিক্ষার্থীরা অটল থাকে এবং আন্দোলন-বিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয় চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা। তখন পরীক্ষা বাতিল নিয়ে কিছু ভিন্নমতও এসেছে গণমাধ্যমে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি তারা কখনোই সমর্থন করেন না।

কারণ, পরীক্ষা ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই ও মূল্যায়নের সুযোগ নেই। আমরা চাই আর কখনোই যেন এ ধরনের সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্তি না হয়। অন্যদিকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগণ বলেছেন, পরীক্ষা না দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের যে শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা কিভাবে পূরণ হবে সেটাও বড় প্রশ্ন। কেননা, এসব শিক্ষার্থী আগামীতে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করবে।

প্রকৌশল, চিকিৎসা ও অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা কতটা সামাল দিতে পারবে সেটি চিন্তার বিষয়। অনেক অভিভাবকও পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে খুশি হননি। সে অবস্থায় যেসব শিক্ষার্থী আগামীতে উচ্চশিক্ষার জগতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে তারা ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়ে কেমন করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

×