ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে

উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গা

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে

উৎপাদন, বিপণন, ব্যবহার নিষিদ্ধ; অথচ সবার হাতেই  দেখা মিলছে পলিথিন। নিত্যদিনের বাজার পণ্যের সঙ্গে  পলিথিনের ব্যবহার যেন নিয়মিত আয়োজন। নিষিদ্ধ পলিথিনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পরিবেশের। দোকানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর  চোখের সামনে পলিথিনের স্তূপ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও শোভা পায় পলিথিনের ব্যাগ: অথচ আইন করে সর্বনাশা পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুপারশপে ১ অক্টোবর ও কাঁচাবাজারে ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যবহারে নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

অথচ আইনের কঠোর ব্যবহারে ২০০২-৩ সালেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পর ক্রমান্বয়ে পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যায়। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক পলিথিন উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ আইনত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও অবাধে চলছে পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া।  নিত্যদিনের বাজার সদাই থেকে শুরু করে এক টাকা দামের চকলেট হোক বা লাখ টাকার ফ্রিজ সব কিছুর সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে পলিথিন। এসব পলিথিন ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। অপচনশীল পলিথিনে ভরাট হচ্ছে পয়োনিষ্কাশনের নালা-নর্দমা। আর তাতে  তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

পলিথিন আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। স্বাভাবিকভাবে পলিথিন পচনশীল নয়। পলিথিন মাটির উর্ববরতা হ্রাস করে ও মাটির গুণাগুণ পরিবর্তন করে ফেলে। পলিথিন পোড়ালে এর উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড পুড়ে কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়ে বাতাস দূষিত করে পলিথিনের ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিস শহরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পলিথিন ও বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য ব্যাপকভাবে ব্যবহারে সারাদেশে খাল-বিল, নদী-নালা থেকে শুরু করে সমুদ্র পর্যন্ত প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

সেই সঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। প্লাস্টিক শুধু আসবাবপত্র বা পলিথিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে নামি-দামি কসমেটিক কোম্পানির সাবান, ফেসওয়াস, টুথপেস্ট, বডিওয়াস, ডিটারজেন্ট, বিস্কিট, চানাচুর, চিফস, মসলা ইত্যাদিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যাদির মোড়কে মাইক্রোবিড নামক ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি দেখা যায়। পলিথিনের বিপরীতে পাটজাত ও কাপড়ের তৈরির ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।

বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক ড. মুবারক আহমেদ খান ছয় বছরের গবেষণার পর এক ধরনের পলিমার  তৈরি করেন। যেটি দেখতে পলিথিনের মতো হলেও সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এই পলিমারের তৈরি ব্যাগ ফেলে দিলে পচে গিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। রাজধানীর ডেমরার রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিমাণে তৈরি হচ্ছে পাট থেকে তৈরি পলিমার ব্যাগ। দেখতে সাধারণ পলিথিনের মতো এই ব্যাগগুলো তুলনামূলকভাবে অধিক টেকসই ও ভার বহনে সক্ষম।

পচনশীল হলেও এই ব্যাগের ভেতর বাতাস বা পানি প্রবেশ করতে পারে না। পলিথিনের তুলনায় পাটের পলিমার দেড় গুণ বেশি ভার বহন করতে পারে। এটি পানি শোষণ না করলেও ফেলে দেওয়ার তিন থেকে চার মাসের মধ্যে পঁচে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। পলিথিন বর্জনের মাধ্যমে পাটজাত ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার বৃদ্ধিতে অভ্যস্ত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে হবে আগামীর এই বাংলাদেশকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

×