ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

রোহিঙ্গা শরণার্থী পুনর্বাসন

-

প্রকাশিত: ২১:৪১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

রোহিঙ্গা শরণার্থী পুনর্বাসন

সম্পাদকীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমারের রাখাইনের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ অঞ্চল তৈরিসহ তাদের সহায়তায় নিমিত্ত উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার থমাস অ্যান্ড্রুজ গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এই আহ্বান জানান।

এও বলেন যে, এটি একটি ভালো সূচনা হতে পারে এবং সেটি বাংলাদেশে হাজার হাজার নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনুপ্রেবেশ ঠেকাতে পারে। এ সময়ে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার থমাস অ্যান্ড্রুজ জানান, সম্প্রতি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধজনিত পরিস্থিতির কারণে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্ধাস্তু বসবাস করছে।

এ সময় ড. ইউনূস রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন ত্বরান্বিত করার জন্য সহায়তা চান জাতিসংঘের। 
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার, জবাবদিহির নিশ্চয়তাসহ চলমান সংকট সমাধানের ওপর জোর দিয়ে জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৫৩তম অধিবেশনে পাস হয়েছে প্রস্তাবটি।

একই সঙ্গে ক্রমহ্রাসমান অপর্যাপ্ত অনুদান ও সাহায্য বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সর্বোপরি, রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দায়ী ব্যক্তিদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় আনাসহ তদন্ত প্রক্রিয়া আরও জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও, যা সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমেদ খানের বাংলাদেশ সফরটিও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি  কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্ষণ ও গোলাগুলির দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। এ পর্যন্ত আইসিসির ১১টি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। প্রধান কৌঁসুলি স্বীকার করেছেন, রোহিঙ্গা বিতাড়নের মামলাটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ।

মিয়ানমার সহযোগিতা না করায় বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকারের বিষয়েও ঘাটতি রয়েছে। তবু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর ঘৃণ্য নৃশংসতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কাজটি জরুরি। এর পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বকে এই সমস্যার জরুরি সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, যা ইতিবাচক। সেই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে প্রত্যাবাসনে ড. ইউনূসের প্রস্তাবটি অবশ্যই ইতিবাচক।

×