ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ

-

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ

সম্পাদকীয়

দেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সেটি হোক না কেন বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাসসহ যানবাহন, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা অথবা গ্যাসস্টেশন। এবারে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রিনলাইফ ফিলিং স্টেশনে মেঘনা পরিবহনের একটি বাসে গ্যাস নেওয়ার সময় ঘটেছে ভয়াবহ সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের অনেকেরই হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তদুপরি প্রায় সবাই অগ্নিদগ্ধ। কমবেশি সবারই অবস্থা আশঙ্কাজনক।

অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবার রাত ২টায় ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। নিহত তিনজন সিএনজিচালিত অটোরিক্সার চালক। আহত হয়েছেন বাসচালকও। বিস্ফোরিত সিলিন্ডারটিও ওই বাসের। সান্ত¡না এই যে, এ সময় বাসে কোনো যাত্রী ছিলেন না। তবে বাইরে গ্যাস নেওয়ার জন্য আরও অনেক অটোরিক্সা অপেক্ষা করছিল। লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রঞ্জিত কুমার জানান, ‘বাসের গ্যাস সিলিন্ডারটি ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের’। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। 
দেশে প্রতিদিন গড়ে দুটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছেÑ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের এমন তথ্য উদ্বেগজনক। বাসাবাড়ি এবং যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের সব তথ্য সংবাদপত্রে আসে না। দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম দায়ী ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ ও সিলিন্ডার। তাই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে আরও সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, রাজধানীতে অগ্নিদুর্ঘটনার প্রায় ৩০ ভাগই হয়ে থাকে গ্যাসের পাইপলাইনের ছিদ্র থেকে।

বিভিন্ন স্থানে যে গ্যাস সরবরাহ লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে, তার ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানীতেই অর্ধশত বছরের পুরনো লাইনও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আগেও বলেছেন, গ্যাস দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অবৈধ সংযোগ। গ্যাসের মতো অতি দাহ্য পদার্থের সঞ্চালন, সরবরাহ লাইন সংযোগ করতে হয় শতভাগ টেকসই, নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্তভাবে।

সিলিন্ডার এবং এতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের মান পরীক্ষার দায়িত্ব বিস্ফোরক পরিদপ্তরের। যথাযথভাবে এসব গ্যাস সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা করা হয় না। এ সুযোগে বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার ও এতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ।
সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মানুষের প্রাণহানির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এর প্রতিকারের বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। বছরে কত মানুষ এভাবে মারা যায়, কত মানুষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারায়, সে বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী বোমার সঙ্গে তুলনীয়। গ্যাস সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট আয়ু থাকে। সরকারের বিস্ফোরক অধিদপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের আয়ু ১০ থেকে ১৫ বছর হয়ে থাকে।

এই সময়ের পরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাই আয়ু শেষ হলে সেগুলো বাতিল করা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশে তা প্রায় কেউই জানে না বা করে না। কত বছর ধরে একটি সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের কাছে সেই হিসাবও থাকে না। বছর কয়েক আগে বিস্ফোরক অধিদপ্তর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ১১ হাজার গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করেছিল।

তারা দেখতে পেয়েছিল, আট হাজার সিলিন্ডারই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরে সেগুলো তখন বাতিল করা হয়। এ থেকেই অনুমান করা যায়, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঝুঁকির মাত্রা কত ব্যাপক। সিলিন্ডার ভালো থাকলেও নি¤œমানের রেগুলেটর ব্যবহার করা হলে আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

গ্যাসের চুলা ব্যবহারে যথাযথ সতর্কতা ও সচেতনতার অভাবেও ঘটে দুর্ঘটনা। এসব সমস্যা দূর করার জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে উদ্যোগী হতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডারের গুণগতমান নিশ্চিত করা, সেগুলোর নিয়মিত পুনঃপরীক্ষার ওপর নজরদারি করার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

×