ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

বারবার জাহাজে আগুন

প্রকাশিত: ২১:১৬, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

বারবার জাহাজে আগুন

সম্পাদকীয়

একের পর এক জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা একইসঙ্গে দুঃখজনক ও রহস্যজনক। শনিবার মধ্যরাতে কুতুবদিয়া উপকূলের পশ্চিমে সাগরের বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজ সোফিয়া ও মাদার ভেসেল ক্যাপ্টেন নিকোলাস নামে দুটি জাহাজে ঘটে অগ্নি দুর্ঘটনা। তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসবাহী দুটি জাহাজে আগুন লাগার ১২ ঘণ্টা পর তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

স্বস্তির বিষয় হলো ৩১ ক্রু সাগরে ঝাঁপ দেওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান। পাশে থাকা একটি টাগবোট তাদের উদ্ধার করে। ঘটনা তদন্তে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ নিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় জ্বালানিবাহী চারটি জাহাজে আগুন লেগেছে। এসব ঘটনায় চারজন প্রাণ হারালেও সাগরে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচেন ৭৮ জন।

জাহাজে একের পর আগুনের ঘটনায় কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও চট্টগ্রাম বন্দরের টাগবোট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। তবে সাগরে থাকা বড় জাহাজে আগুন লাগলে এসব প্রতিষ্ঠান তা নিয়ন্ত্রণে কতটা সক্ষম হবে– সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) এমডির যে বক্তব্য পাওয়া গেছে, তাতে তেল পরিবহন সংকটে স্থবিরতার শঙ্কা জাগা স্বাভাবিক। তিনি বলেছেন, ‘তেল পরিবহনের জন্য এখন আমাদের হাতে ভালো কোনো জাহাজ নেই। যে দুটি অয়েল ট্যাঙ্কার ছিল, আগুন লাগার পর সেগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে।’
ঠিক কী কারণে আগুন লেগেছে, তা তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি বন্দর, নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা। তবে জ্বালানি গ্যাস পরিবহনে যে পরিমাণ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল, সেটি জাহাজের মালিকপক্ষ নেয়নি বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তার ভাষ্যÑ সোফিয়ায় গ্যাসের যে চিমনি ছিল, তা থেকে বিষাক্ত গ্যাস বের হচ্ছিল।

সেই গ্যাসের কারণেই মূলত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। ১৫ দিন আগে যে দুটি ট্যাঙ্কারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে, সেগুলো ছিল ৩৭ বছরের পুরনো। স্পর্শকাতর স্থাপনায় এমন জাহাজ দিয়ে কাজ পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তাতে বাধা দেয়নি নৌ-বাণিজ্য দপ্তর। দেশে লাইটার জাহাজের নিরাপত্তা সনদ দেয় দপ্তরটি। আগুনে পুড়ে যাওয়া জাহাজ সোফিয়ায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা 
যথাযথ ছিল কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
আমরা আশা করব, তদন্ত কমিটি সফলতার সঙ্গে রহস্যময় অগ্নিকা-ের ঘটনাসমূহের তদন্ত করতে সমর্থ হবে। এর নেপথ্যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক পরিকল্পনা কাজ করেছে কিনা, সেটিও স্পষ্ট হবে। তবে জাহাজের ফিটনেস এবং বন্দর তদারকি কর্তৃপক্ষের সততা নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠছে, তারও একটা সুরাহা হওয়া দরকার। আর কোনো জাহাজে আগুন লেগে দেশের ক্ষতি হোক, এটি আমরা চাই না। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিষয়টি তত্ত্বাবধান করা বাঞ্ছনীয়।

×