ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ

সম্পাদকীয়

শুক্রবার গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) বা বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪-এ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানও তুলে ধরা হয়েছে। দেশভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে গত বছর ১৯ স্কোর নিয়ে ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮১তম। তবে চলতি বছর ১৯ দশমিক ৪ স্কোর করেও ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম।

অর্থাৎ স্কোরে উন্নতি করলেও অন্য দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে ক্ষুধাসূচকে। দক্ষিণ এশিয়ায় সার্বিকভাবে ক্ষুধা এখনো গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। নি¤œমানের খাদ্য, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে এ অঞ্চলে অপুষ্টি বাড়ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা রয়ে গেছে উচ্চ স্তরে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধা মোকাবিলা করছে। দেশে এখনো ১১.৯ শতাংশ মানুষ অপুষ্টির শিকার। ২.৯ শতাংশ শিশু তার ৫ম জন্মদিনের আগেই মৃত্যুবরণ করে। অপুষ্টির কারণে ৫ বছরের কম বয়সী ২৩.৬ শতাংশ শিশুর বয়স অনুপাতে উচ্চতা বাড়ছে না। এ ছাড়াও ৫ বছরের কম বয়সী ১১ শতাংশ শিশুর উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বাড়ছে না। তবে ক্ষুধা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সার্বিকভাবে বলা যায়, ক্ষুধা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে আগামীতে এ উন্নতির গতি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। 
দেশের কৃষিজমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ চমক সৃষ্টি করেছে। এক সময় মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে চাষাবাদ হতো। সেই পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে কৃষিতে এখন আধুনিকায়নের ছোঁয়াও লেগেছে। তারপরও বৈশ্বিক খাদ্য সূচকে পিছিয়ে যাচ্ছে দেশ। দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের অনেক মানুষ পুষ্টিহীনতা ও খাদ্যসংকটে ভুগছে। বিপরীতে ব্যক্তিপর্যায়ে অসচেতনতার কারণে দেশে হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাসাবাড়িতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হচ্ছে শুধু শৌখিনতার দোহাই দিয়ে।

এ বৈষম্য দূর করতে খাবারের অপচয় না করে সেগুলো নিয়ে দুস্থদের সহায়তায় সকলের এগিয়ে আসা উচিত। অনেকের ধারণা, উৎপাদন বাড়লেই দেশে অপুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধান হবে। কিন্ত অর্থনীতিবিদদের মতে, কাক্সিক্ষত মাত্রায় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের সুষ্ঠু বণ্টনব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ববাজারের অস্থিরতা, বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি, অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতাসহ যেসব কারণে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, সেসব সমস্যার সমাধানে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

বর্তমানে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে বহন করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে দেশের অবস্থানের উন্নয়ন ও মানুষের ক্ষুধা দূরীকরণের লক্ষ্যে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা আবশ্যক।

×