সম্পাদকীয়
এক বছর ধরে ফিলিস্তিনে আক্রমণ করে যাচ্ছে ইসরাইল। এ যুদ্ধ বিস্তৃত হয়েছে লেবাননসহ আরও কয়েকটি ফ্রন্টে। যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে মধ্যপ্রাচ্যে কি বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে? বস্তুত যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে শুরু থেকেই যুক্ত। ইসরাইলের অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আসছে এবং বিপুল অর্থসহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত সুবিধা, গোয়েন্দা সহযোগিতা ও সমর্থন তারা দিয়ে আসছে। গত এক বছরে গাজা উপত্যকায় ৪০ হাজারের বেশি স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরাইল।
তাদের দাবি, একই সময় ৪ হাজার ৭০০ সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা হয়েছে। হামাসের হামলার জবাবে ওইদিন থেকেই অবরুদ্ধ গাজায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরাইল। ২৩ লাখ বাসিন্দার এই উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় এক বছরে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪১ হাজার ৮৭০ জন। জনসংখ্যার হিসেবে গাজার প্রতি ৫৫ জনের একজনকে হত্যা করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় নিহত ব্যক্তিদের ৬৯ ভাগই নারী ও শিশু।
ইসরাইলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনের গাজার প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের আকস্মিক ও নজিরবিহীন হামলার জবাবে ‘কঠিন প্রতিশোধ’ নেওয়ার হুমকি থেকেই নতুন করে সংঘাতের সূচনা। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকাকে ‘জনমানবশূন্য দ্বীপে’ পরিণত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এরপর আর কী বলার থাকে! সাড়ে সাত দশক ধরে ইহুদিবাদীদের গোলাগুলি, বোমা, রাসায়নিক অস্ত্রে বেঘোরে মরছেন ফিলিস্তিনিরা। উচ্ছেদ হচ্ছেন নিজ বাসভূমি থেকে। ফিলিস্তিনিদের আরেক আবাসস্থল পশ্চিম তীরও ইসরাইলি বাহিনীর হামলার লক্ষ্য। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা শুধু ফিলিস্তিনিদের আত্মিক, ন্যায্য ও আইনসংগত দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বজনীন মানবমুক্তির স্বার্থে সে দাবি আরও উচ্চকিত হচ্ছে।
দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসানে ইসরাইল-ফিলিস্তিন আলাদা দুই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাই বলেছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ফিলিস্তিন-ইসরাইলের বর্তমান উত্তেজনা ও সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনায় চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ মনে করে, ইসরাইলি দখলদারিত্বের অধীনে বসবাস ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন এ অঞ্চলে শান্তি আনতে পারবে না। তাই বাংলাদেশ একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে সমর্থন করে। যদি ফিলিস্তিন ও ইসরাইল জাতিসংঘের রেজুলেশন নং ২৪২ এবং ৩৩৮ অনুসরণ করে দখলমুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাশাপাশি বসবাস করে, তবে এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসতে পারে।
ফিলিস্তিনিদের পুরনো ক্ষতকে রক্তাক্ত করে বিশে^ কিভাবে শান্তি স্থাপিত হতে পারে? তাই সংঘাতের চাই স্থায়ী সমাধান। সেটি যে ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্যেই নিহিত রয়েছে, সে কথা দশকের পর দশক ধরেই নির্বিবাদী মানুষ উচ্চারণ করে আসছেন। বিশ^নেতাদের এখন সে উদ্যোগ নেওয়াই জরুরি।