.
বিশ্বব্যাপী নারীদের শীর্ষস্থানে থাকা নানাবিধ দুরারোগ্য ব্যাধির অন্যতম স্তন ক্যান্সার। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দেশে প্রতিবছর অন্তত তেরো হাজার নারী নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে। যাদের মধ্যে করুণ মৃত্যুবরণ করছেন আট হাজারের বেশি। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বায়নের প্রভাবে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনও এ রোগের জন্য অনেকটা দায়ী। বয়স বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ৪০ বছরের বেশি বয়স্ক নারীদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাছাড়া স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অর্থাৎ মা-খালাদের থাকলে সন্তানদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। অবিবাহিত বা সন্তানহীন নারীরাও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন।
সাধারণত দেশের অধিকাংশ নারী স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে অসচেতন, চিকিৎসকের কাছে যেতে অনীহা, নিজের ও পরিবারের অবহেলা, সামাজিক ও ধর্মীয়সহ নানা কারণে শেষ পর্যায়ে (চতুর্থ পর্যায়) ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন; যখন তাদের অনেককেই বাঁচানো সম্ভব হয় না। দেশে সার্বিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে নিয়মিত স্ক্রিনিং খুবই জরুরি। তারপরও সচেতনতার অভাবে দেশের অধিকাংশ নারীকে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে নিয়মিত স্ক্রিনিং করতে দেখা যায় না। সরকারের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালে জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের স্ক্রিনিং ব্যবস্থা এখনো সীমিত পর্যায়ে চালু রয়েছে। তাই স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার-এই তিনটির জন্য সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সমন্বিত জাতীয় স্ক্রিনিং কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। উল্লেখ্য, শুধু নারী নয় স্থূলাকার পুরুষদেরও স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএআরসির (ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন এই ক্যান্সারে। সংখ্যায় কম হলেও পুরুষদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই নারী-পুরুষ উভয়েরই এটি রোধে নিয়মিত স্ক্রিনিং প্রয়োজন।
ক্যান্সার শব্দটি শোনার পর অনেকেই ঘাবড়ে যান এবং নিশ্চিত মৃত্যু বলে মনে করেন। কিন্ত প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি এমন নয়। ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তারপরও প্রযুক্তির উন্নয়নে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় অনেক ধরনের ক্যান্সার, বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। তাছাড়া এই মারাত্মক ব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো আবশ্যক। সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা বাঁচিয়ে তুলতে পারে রোগীদের, ফিরিয়ে দিতে পারে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন। সেই লক্ষ্যে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে- রোগের কারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রচারের মাধ্যমে নানাবিধ বাধা ও লোকলজ্জাকে পাশ কাটিয়ে সময়মতো চিকিৎসা নিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি।