ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

সড়ক ও সেতুতে মহাদুর্নীতি

প্রকাশিত: ২০:০২, ১১ অক্টোবর ২০২৪

সড়ক ও সেতুতে মহাদুর্নীতি

.

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছেটাকার অঙ্কে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ হাজার কোটি থেকে ৫১ হাজার কোটিসোজা হিসাবে মহাদুর্নীতি হয়েছে

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই হিসাব তুলে ধরেছেতারা বলেছে, ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে এই দুর্নীতি হয়েছেপক্ষগুলো হলো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনীতিক, আমলা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার

সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে আমাদের চলতি বছরের শুরুর দিককার বাস্তবতায় ফিরতে হবেজার্মানির বার্লিন থেকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) যে দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন-২০২৩ প্রকাশ করেছিল, তা নিয়ে সদ্যসাবেক ক্ষমতাসীনরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলদুর্নীতির সূচকে ধারাবাহিক অবনমন অবশ্যই উদ্বেগজনক ছিল

দুর্নীতির মাত্রা কোন দেশে কেমন, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইতাদের তথ্য অনুযায়ী, দুর্নীতির মাত্রার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দশম২০২২ সালে ছিল ১২তমধারণাসূচকে দুর্নীতির সংজ্ঞা হচ্ছে, ব্যক্তিগত সুবিধা বা লাভের জন্য সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারধারণাসূচক অনুযায়ী, গত ১৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল গত বছর, অর্থা ২০২৩ সালে

দুর্নীতির সূচকের এই ক্রমাবনতি আমাদের শূন্য দশকের কথা মনে করিয়ে দেয়সেই সময় বাংলাদেশ পরপর পাঁচ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলএক বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এবং চার বছর বিএনপি সরকারের আমলেটিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তান ছাড়া সবার নিচেভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে দুর্নীতির হার বেশি

বর্তমানে ফেরা যাকটিআইবির বর্তমান গবেষণাটিতে ঠিকাদার, সড়ক বিভাগের আমলা ও প্রকৌশলীসহ ৭৩ জনের সাক্ষাকার নেওয়া হয় এবং ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়পাশাপাশি বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়এসবের ভিত্তিতে টিআইবি একটি প্রকল্পে মোট খরচের কত শতাংশ ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ব্যয় হয়, তা হিসাব করেছে

সড়ক ও সেতুতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের দুর্নীতি হয়েছে সেটির জন্য সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রীকে পুরোই কৃতিত্ব দিতে হবেপরিতাপের বিষয় হচ্ছে ওই মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আবার ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকদলের অত্যন্ত দায়িত্বশীল পদে থেকে তার দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যকলাপ এবং দুর্নীতির রাক্ষস হয়ে ওঠায় স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে রাজনীতি ও ক্ষমতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তিনি দেশের কত বড় ক্ষতিসাধন করেছেনবাংলায় একটি প্রবাদ আছে- চোরের মায়ের বড় গলাদেখা যাচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্চার ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাই ছিলেন মহাদুর্নীতিবাজসড়ক ও সেতুতে মহাদুর্নীতির কারণে এটা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট যে বিগত পনেরো বছরে দেশে নির্মিত বেশিরভাগ সেতু ও সড়ক টেকসই ও মানসম্পন্ন হয়নিদুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ সেতু ও সড়কগুলো মেরামত ও ক্ষেত্রবিশেষে পুনর্নির্মাণের জন্য আবারও দেশের টাকাই ব্যয় করতে হবেতাই প্রশ্ন উঠবে, এসব দস্যুতা ও অপরিণামদর্শিতার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা কি অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে? এটা কখনোই হতে পারে নাএসব গণশত্রুর কঠোর শাস্তিই প্রাপ্য

×