ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

ইয়াবার ভয়াল থাবা

প্রকাশিত: ২০:২০, ১০ অক্টোবর ২০২৪

ইয়াবার ভয়াল থাবা

সম্পাদকীয়

দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধের (মানস) হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে মাদকগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত এবং বাকি ৫০ লাখ মাঝে মধ্যে মাদক সেবন করে থাকে। সেই হিসাবে দেশের প্রায় ১৭ কোটি ১৫ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে গড়ে প্রতি ১২ জনে একজন মাদকসেবী। বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে প্রতিমাসে গড়ে ৩০ কোটি টাকার ইয়াবার চালান আসছে।

এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর আসছে সাড়ে ৩ শতাধিক কোটি টাকার ইয়াবা। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার ও ভারতের ১৪৬টি সীমান্ত পয়েন্ট অরক্ষিত থাকায় সহজেই মাদক পাচার হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক মিয়ানমার থেকে ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান আইস বা ক্রিস্টাল মেথ (মেথএমফিটামিন) আসার পরিমাণও ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে নতুন উদ্বেগ।
মিয়ানমারে সীমান্ত সংলগ্ন ৪৫টি ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখান থেকে লাখ লাখ ইয়াবার চালান আসছে বাংলাদেশে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও আসছে হেরোইন, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত-অপ্রচলিত মাদক। সম্প্রতি প্রসাধনীর দোকান ও লবণবাহী ট্রাক থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ৩৮ হাজার ৫০০টি ইয়াবা জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মাঠ পর্যায়ে বিজিবির অভিযান এবং গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা চললেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মাদক পাচারকারীদের। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই অবৈধ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও। 
দেশের জনসংখ্যার মধ্যে রয়েছে বিপুলসংখ্যক বেকার। তারা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ায় ভুগে থাকে এক ধরনের হতাশায়। এই শ্রেণি খুব সহজেই মাদকাসক্ত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ। মাদকের ভয়াল আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে না পারলে দেশ এক সময় নিমজ্জিত হবে অন্ধকারে। একাধিকবার দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাদক পাচার বন্ধে নানা কর্মসূচি নিলেও ব্যর্থ হয়েছে এসব পদক্ষেপ। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৭২ কিলোমিটারই অরক্ষিত।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার পর থেকেই বেড়েছে মরণনেশা ইয়াবা পাচারের ঘটনা। হেরোইন, বাংলা মদ, চরস, গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদকের স্থান দখল করে নিয়েছে ইয়াবা। কক্সবাজার এবং বান্দরবান জেলায় যেসব পয়েন্ট অরক্ষিত ও দুর্গম, সেসব স্থানে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও যেতে পারেন না। এসব পয়েন্ট দিয়ে আগে আসত ইয়াবা। এখন ইয়াবার সঙ্গে আসছে আইসও। নাফ নদ ও সাগরপথে মাছ ধরার ট্রলারে করেও বিভিন্ন রুটে আইস ও ইয়াবা আসছে।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনের (২০২৩) তথ্য মতে, মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে গড়ে আনুমানিক ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। মূলত চার ধরনের মাদক ক্রয়ের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার হয়। দেশের উন্নয়নে স্থলপথের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্ট গার্ডকে সীমান্তে মাদকসংক্রান্ত অভিযানে আরও কঠোর হতে হবে।

×