সম্পাদকীয়
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৩ অক্টোবর সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় ৮ সদস্যের বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষে এই কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে কমিশনের প্রধান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে কমিশনের কোনো সুপারিশ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান বলেন, অবশ্যই থাকবে।
নির্বাহী বিভাগ যেন বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সে বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। তবে কমপ্লিট সেপারেশন বলতে কিছু নেই। রাষ্ট্রের তিন অঙ্গÑ নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন সভা মিলেমিশে কাজ করতে হবে। কারণ, আদালত রায় দিলে তার বাস্তবায়ন করে থাকে সরকার। আবার বিচার বিভাগ না থাকলে দেশ চলতে পারে না। তবে বিচার বিভাগের কথা শুনতে হবে সবাইকে।
এর বাইরে আরও দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। অধঃস্তন আদালতে বিচারকাজে যাতে বিলম্ব না হয় এবং বিচারকাজের ব্যয় যাতে কমে আসে সে বিষয়ে সুপারিশ থাকবে। এর পাশাপাশি উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু সুপারিশ করা হবে, যাতে যোগ্য ও দক্ষদের নিয়োগ নিশ্চিত হয়। এক্ষেত্রে যেন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না ঘটে। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিচের কোর্টের স্টেক হোল্ডার, জুডিশিয়ারি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, জেলা আইনজীবী সমিতি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকÑ সবার সঙ্গে আলোচনা করে এবং মতামতের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হবে চূড়ান্ত সুপারিশমালা।
আপাতত কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে না। আমরা শুধু সুপারিশ প্রণয়ন করে সরকারের কাছে জমা দেব। তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে উপদেষ্টা পরিষদ।
উল্লেখ করা আবশ্যক, দেশের অধিকাংশ জুডিশিয়াল কর্মকর্তা এবং আইনজীবীই সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ। মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক অসৎ-দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতি ও আইনজীবীর জন্য মাঝে মধ্যে জুডিশিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং যথাসময়ে বিচারকার্য সমাপ্ত করা সময়ের অনিবার্য দাবি। দ্রুত মামলা জটের সংখ্যাও কমিয়ে আনা বাঞ্ছনীয় অবশ্যই। বর্তমানে প্রায় ৪২ লাখ মামলা রয়েছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এর জন্য প্রধানত দায়ী বিচারকের স্বল্পতা এবং প্রয়োজনীয় এজলাসের অভাব। বিলম্বিত বিচারে ভুক্তভোগী বঞ্চিত হয়ে থাকেন ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে।
এর পাশাপাশি সারাদেশের আদালতগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নতুন বিচারপতি নিয়োগেও বর্তমান সরকারকে আন্তরিক ও সচেষ্ট হতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত বিচারপ্রার্থী প্রতিদিন ভিড় করছেন আদালতে। জমি নিয়ে বিরোধ, নারী নির্যাতন ও মাদকদ্রব্য নিয়ে বেশি মামলা হয়, অথচ সেই হারে বিচারক নেই। ফলে, মামলা জট হচ্ছে। দেশে আইনের শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য প্রয়োজন মামলা জট নিরসন এবং বিচারব্যবস্থা ঢেলে সাজানো তথা সংস্কার। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই প্রত্যাশা।