ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

গোধূলি সুন্দর হোক

উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা

প্রকাশিত: ২১:২২, ৯ অক্টোবর ২০২৪

গোধূলি সুন্দর হোক

এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চায় না

এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চায় না তবু আমাদের চলে যেতে হয়। রবীন্দ্রনাথের লেখনী সেই চরণ যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়- ‘যেতে নাহি দিব! তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’। মানুষকে পৃথিবীর আলো ছেড়ে একদিন চলে যেতে হয়। কিন্তু এই চলে না যাওয়ার আগ মুহূর্তে আমরা প্রবীণদের কতটুকু যত্ন নিই সেটির প্রশ্ন থেকে যায় সমাজের কাছে। দীর্ঘকাল যারা বেঁচে থাকেন, শেষ জীবনে দেখা যায় বেশিরভাগেরই কাটে বড় কষ্টে। সমাজের এমন করুণ দৃশ্য যেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরে বেশি দেখা যায়। হাঁটু কাপা শরীরে একটি প্লেট নিয়ে রাস্তাঘাটে দেখা যায় অনেক বয়োঃবৃদ্ধদের। ভোর না হতেই রাস্তায় দুই পয়সা পাওয়ার আশায় বেরিয়ে পড়া যেন তাদের প্রতিদিনের রুটিন। সাধারণত আমরা ৬০ বছরের পর হতে প্রবীণ ধরে থাকি।

বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে প্রবীণদের সংখ্যা অনেক। দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিত্তশীল  প্রবীণের সংখ্যা হাতে গোনা খুব কম বলা চলে। পরিসংখ্যানে জানা গেছে, দেশের দুই-তৃতীয়াংশ প্রবীণই দরিদ্র এবং ৪৮ শতাংশ প্রবীণের মৌলিক চাহিদা পূরণের সামর্থ্য নেই। সমাজের পরিবারে প্রবীণ অসুস্থ মানুষকে দেখভালের জন্য উপযুক্ত কাউকে পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পেপার পত্রিকায় মাঝে মাঝে চোখ পড়ে  ‘ছেলে বিদেশে থাকা অবস্থায় দেশের বয়োবৃদ্ধ বাবা/মায়ের মৃত্যু’। অনেক বিত্তশীল পরিবারের প্রবীণরা অবহেলিত সেখানে দরিদ্র দেশে অসচ্ছল পরিবারের প্রবীণদের অবস্থা আরও শোচনীয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না।

কিন্তু আমরা তাঁদের অবহেলার মধ্যে জীবন যাপন করতে দিই। অথচ তাঁদের প্রয়োজন ঠিকমতো যতœ, সন্তানদের থেকে খুনসুটি একটুখানি সময়। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে অনেক বয়োবৃদ্ধ যতœ তো বিলাসিতা সেখানে মৌলিক চাহিদাগুলোই পূরণ করতে পারে না। যখন একজন প্রবীণ অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন দরিদ্র পরিবারের সামর্থ্য নেই সুচিকিৎসা করার। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে অযাচিত জীবন কেটে পৃথিবীর আলো দেখা বন্ধ হয়ে যায় অনেকের। পরিবারের চাহিদা পূরণের অভাব নেই কিন্তু দেখা যায় বয়োবৃদ্ধ  প্রবীণদের একটুখানি যতœ নেওয়ার সময়টুকু যেন থাকে না।

যে বাবা- মা সন্তানদের এত স্নেহ, মায়া, মমতা, পড়াশোনা থেকে শুরু করে পারিবারিক শিক্ষা থেকে পৃথিবীর আলোর পথ দেখিয়েছে তাঁদেরই বৃদ্ধ বয়সে যেতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধ অবস্থায় পিতা-মাতাকে সন্তানের কাছ থেকে সুরক্ষা দেবার জন্য ২০১৩ সালে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন’ প্রণয়ন করে সরকার, যেখানে পিতা-মাতার ভরন-পোষণ না করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। প্রবীণদের নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা করলে হবে না সেটির বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের চোখের সামনে প্রবীণদের সেবা, যতœ,  সময় দিয়ে আমাদের সমাজের চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে। শেষ বিকেলের আলো যদি সুন্দর হয় তাহলে শেষ বয়সে তাঁদের জীবনও সৌন্দর্যে ভরে উঠুক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

×