সম্পাদকীয়
সর্বস্তরের মানুষের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে শুরু হতে যাচ্ছে ‘পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি।’ সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই এই মেগা কর্মসূচির লক্ষ্য। এটি দেশের ইতিহাসে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতের সর্ববৃহৎ কর্মসূচি। এর জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা। মেগা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি খাত থেকে আসবে ৮০ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা।
আর প্রকল্প ঋণ হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশসহ ১১টি উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে ঋণ ও অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে ২৫ হাজার ৪১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ১৩১ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৪৭ দশমিক ৯ কোটি মার্কিন ডলার। নিঃসন্দেহে এই পরিমাণ ঋণ ও অনুদান বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল প্রাপ্তি।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ ইতোমধ্যে প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে কিছু পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রকল্পটি সংশোধন করে পাঠালে নেওয়া হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিসেবা, সচেতনতামূলক কর্মকা-, প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মশালা ও সেমিনার, তথ্য ব্যবস্থাপনা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, মনিটরিং এবং ইভ্যালুয়েশন, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি। মেগা প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে সারাদেশে সর্বস্তরের মানুষের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি এবং পুষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রায় সর্বত্র ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থা ও দলীয়করণের বিষয়টি সুবিদিত। এ রকম অব্যবস্থার বিষয়টি চরমভাবে প্রকটিত হতে দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশেও সংঘটিত করোনা অতিমারি চলাকালীন। সে সময় দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা ছিল না বললেই চলে। পরিবর্তে দেখা যায় চরম অরাজকতা ও বিশৃৃঙ্খলা। নিজেদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার অজুহাতে অধিকাংশ ডাক্তার-নার্সকে অনুপস্থিত অথবা কর্তব্য পালনে অনীহা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এই অবকাশে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে বহুকথিত শাহেদ কা-ের মতো ভুয়া হাসপাতাল ও ডাক্তার সাবরিনা দম্পতির মতো ভুয়া সনদদাতা প্রতিষ্ঠান। এসবই হয় সরকারের ছত্রছায়ায় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায়।
সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণআন্দোলনে সাবেক সরকারের পতনের পর এখন এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তন তথা সংস্কারের। দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন খাতের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান অগ্রগণ্য। এমডিজি ও এসডিজিতে যতটা লক্ষ্য সন্নিবেশিত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান যে দুরবস্থা, তাতে সেই লক্ষ্য পূরণ করা দুরাশা।
সারাদেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া দুঃসাধ্য। কেননা, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক-নার্সের অনুপস্থিতি, যা এখানে সুশাসনের অভাব ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি প্রকট করে তোলে। মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।