ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
৭ অক্টোবর ২০২৪ ছিল ইসরাইলে হামাসের অতর্কিত হামলার এক বছর পূর্তির দিন। ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের এই আক্রমণ ও হাজারেরও বেশি বেসামরিক ইসরাইলি হত্যার প্রতিশোধে ইসরাইল ২৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনে ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করে, যাতে অর্ধ-লক্ষাধিক নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়েছে। এই যুদ্ধ এখন ইসরাইলের ফিলিস্তিন আক্রমণকে ছাড়িয়ে লেবানন, ইয়েমেন ও ইরানেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং শেষ কবে মধ্যপ্রাচ্য এতটা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছিল সেটি বলা মুশকিল।
গাজায় ইসরাইলের অমানবিক ও নিন্দনীয় হামলা শুরুর ক্ষেত্রে ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন, বিশেষ করে গাজা এবং লেবাননের ওপর তাদের চলমান হামলা বিশ্বব্যাপী নিন্দা কুড়িয়েছে। এই হামলা শুধু সশস্ত্র সংঘাতের দিক থেকে নয়, বরং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। ইসরাইলের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম স্পষ্ট এবং শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ম্যাক্রোঁর এই অবস্থান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ইসরাইলের সামরিক শক্তির বিপরীতে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন ইসরাইল নানা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো একের পর এক বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ম্যাক্রোঁর এ ধরনের বক্তব্য কেবল নিন্দাই নয়, বরং একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ। ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন শুধু গাজা ও লেবাননের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকছে না; ইরান, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে তারা সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। গাজার ওপর ইসরাইল যেভাবে আক্রমণ চালিয়েছে তাতে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৪২,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বহু নারী ও শিশু আছে। এই আক্রমণগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
গাজায় ইসরাইল প্রতিদিন ২০০০ টন বোমা ফেলছে, যা গাজার জীবনযাত্রাকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় নিহত মানুষের ওপর যে হামলা হচ্ছে তাতে ফ্রান্সের সরবরাহকৃত কোনো অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। তিনি বলেছেন, সময় এসেছে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার। ম্যাক্রোঁর এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছে। তার বক্তব্য একাধারে গাজাবাসীর মানবাধিকার ও মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে একটি নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গাজার অবস্থা বর্তমানে এক চরম মানবিক বিপর্যয়ে পর্যবসিত হয়েছে। গাজায় মানুষের খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ইসরাইলের অবরোধের কারণে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন ত্রাণ সরবরাহ করতে পারছে না। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী গাজায় ৮০ শতাংশ মানুষ বর্তমানে ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল এবং প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার। ইসরাইলের এই অবরোধ এবং হামলা স্পষ্টতই মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ম্যাক্রোঁর মতে ইসরাইলের এই আক্রমণ শুধু তাদের নিরাপত্তা হুমকি নয়, বরং এটি পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করছে।
তিনি ইসরাইলের হামলাকে সমালোচনা করে বলেন, ‘এই আগ্রাসন বন্ধ করা উচিত। এটি শুধু সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ ম্যাক্রোঁর এই অবস্থান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কারণ, ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের বহু দেশের সমর্থন রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। তবুও ম্যাক্রোঁ তার নীতিগত অবস্থান থেকে সরে আসেননি এবং ইসরাইলের হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। এটি দেখিয়ে দেয় যে, নৈতিকতার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের অবস্থান কতটা শক্তিশালী এবং এটি অন্য পশ্চিমা নেতাদেরও প্রভাবিত করেছে।
এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, যখন ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র ইসরাইলকে অস্ত্র বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে তখন ইসরাইলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও মিত্র রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র তাদের ২০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফিলিস্তিনের মতো একটি দুর্বল এবং প্রায় সামরিক শক্তিহীন একটি দেশকে হামলা করতে কিংবা সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিষ্ক্রিয় করতে ইসরাইলের কোনো সামরিক শক্তি প্রয়োগেরও প্রয়োজন ছিল কি না সে প্রশ্ন থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জার্মানি ইসরাইলের এই ধ্বংসযজ্ঞে অকুণ্ঠ সামরিক ও নীতিগত সমর্থন দিয়ে তাদের যুদ্ধাপরাধকে যৌক্তিক করার প্রয়াসে পাশে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি গাজার পাশাপাশি লেবাননের ওপরও ইসরাইল হামলা চালানো শুরু করছে সেখানে হেজবুল্লাহর ঘাঁটি আছে এই অভিযোগে। লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইল ৫১৬ জনকে হত্যা করেছে, এছাড়া অসংখ্য বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে। ইসরাইলের এই আগ্রাসন লেবাননের মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে এবং সেখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। লেবানন, যেটি ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত, ইসরাইলের এই হামলার কারণে সেটি আরও বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বিশেষ করে লেবাননের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লেবাননকে আরেকটি গাজায় পরিণত হতে দেওয়া যাবে না।’
উল্লেখ্য, ইসরাইল মানবতাবিরোধী যেসব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করছে সেটি আমলে নিয়ে যুক্তরাজ্য গত সেপ্টেম্বর থেকে কিছু অস্ত্র ইসরাইলের কাছে আর বিক্রি না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। হাস্যকর হলেও সত্য, ইসরাইল তাদের এই সামরিক আগ্রাসন চালানোকে ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ দাবি করে। তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এই যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন, ইসরাইলের এই হামলা আরও সহিংসতাই বৃদ্ধি করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
এদিকে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যেও সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র তাদের দীর্ঘদিনের ইরানের প্রতি বৈরিতাকে ইসরাইলের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতও মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গত সপ্তাহে ইরান ইসরাইলে যে মিসাইল হামলা করেছে তার অনেকগুলোই ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে, যদিও পশ্চিমা বিশ্ব তা প্রচার করেনি।
আইরোন ডোমের মতো মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে কিভাবে ইরানের বিপুল সংখ্যক মিসাইল ইসরাইলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানল সেটি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের ইউরোপীয় মিত্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলও নিয়মিতভাবে ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরাইলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পরিকল্পনা করছে। এই পরিস্থিতি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই এক ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে। ইসরাইল যদি এই আগ্রাসন অব্যাহত রাখে তাহলে ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেকেই ধারণা করছিলেন ইসরাইল ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইলে হামলার একবছর পূর্তির প্রতিশোধ নেবে ইরানের ওপর হামলা করে।
ইরান ইতোমধ্যে তাদের আকাশসীমায় সকল বেসামরিক উড়োজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। এদিকে ইসরাইল ইরানের অর্থনীতি ধ্বংস করতে তাদের তেলের খনিগুলোতে হামলা চালাতে পারে এই ধারণায় সারাবিশ্বে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে। এমনকি ইরানের তেলের খনিতে হামলা হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলকে বিকল্প জায়গায় হামলার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করছেন বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো উল্লেখ করেছে।
ইসরাইলের সঙ্গে শুধু ইরান নয়, ইয়েমেন এবং সিরিয়ারও সংঘাত চলছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে একাধিক রকেট হামলা চালিয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল ইয়েমেনে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এই সংঘাতগুলো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক মানচিত্রকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করছে এবং এতে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইসরাইলের এই হামলার কারণে সিরিয়া এবং ইয়েমেনেও চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।
কারণ, ফ্রান্স একমাত্র পশ্চিমা দেশ হিসেবে ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে। ম্যাক্রোঁর এই অবস্থান শুধু নৈতিকতাকে সমর্থন করে না, বরং এটি একটি কার্যকরী রাজনৈতিক পদক্ষেপও বটে। তিনি যখন বলেন ‘এটি বন্ধ করা উচিত,’ তখন তিনি শুধু কথা বলছেন না, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ম্যাঁক্রো তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যে কেবল ইসরাইলকে বার্তা পাঠাচ্ছেন তা নয়, তিনি আদতে ইসরাইলের আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের যে ভূমিকা সেটি বিবেচনায় তাদেরও একটি কঠিন বার্তা পাঠাতে চাচ্ছেন। ম্যাঁক্রো সম্প্রতি তার এক বক্তব্যে যারা একদিকে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতির কথা বলছে, অন্যদিকে ইসরাইলকে গাজার নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করছে, তাদের প্রতি স্পষ্ট উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ইসরাইলের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ইসরাইলের হামলার বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘এই ধরনের সহিংসতা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও ইসরাইলের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একাধিক প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে সেগুলো কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে ইসরাইল জাতিসংঘের মহাসচিবের ইসরাইলে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এই অভিযোগে যে, তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এমতাবস্থায় ম্যাক্রোঁর অবস্থান জাতিসংঘের এই মানবতাবিরোধী আগ্রাসনের বিরুদ্ধের অবস্থানকে কিছুটা হলেও শক্তিশালী করতে পারে। ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন কেবলমাত্র সামরিক দিক থেকে ভয়াবহ নয়, এটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এক বিরাট বিপর্যয় তৈরি করেছে। গাজায় বোমা হামলায় প্রতিদিন অনেক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্তত ১৫,০০০ শিশু ইসরাইলের হামলায় নিহত হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান কেবল একটি অঞ্চলকে নয়, পুরো বিশ্বের বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো। ইসরাইলের এসব হামলার ফলে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশই ইসরাইলের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলোও ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছে। জার্মানির গণমাধ্যমও ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। এটি প্রমাণ করে যে, নৈতিকতার দিক থেকে তিনি কতটা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। ইসরাইলকে তার এই অন্যায় হামলা বন্ধ করতে হবে এবং মানবতার প্রতি আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। ম্যাক্রোঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, বিশ্বে নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিবর্তন আনার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন। ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন যদি অব্যাহত থাকে তবে এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে নয়, পুরো বিশ্ব শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছেন তা শুধু প্রশংসনীয় নয়, এটি বিশ্ব শান্তির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও বটে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা। ফ্রান্সের মতো অন্য দেশগুলোর উচিত ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন করা এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া। বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত করছে যে, মানবিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকল দেশের উচিত সমন্বিতভাবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।
সামরিক শক্তি প্রদর্শনের বদলে শান্তি ও মানবিকতার পথে এগিয়ে আসা জরুরি। সবার জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ এক পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে বিশ্ব নেতাদের উচিত দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পদক্ষেপ এই প্রক্রিয়ায় একটি মাইলফলক হতে পারে। তবে আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প নাকি কামালাÑ কে আসবেন শাসকের ভূমিকায় তার উপরই মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে অনেকাংশে।
৭ অক্টোবর ২০২৪