ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৭ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকার দিনরাত

ঢাকা যানজটে যুগপৎ স্থবির ও অস্থির

সপ্তাহখানেক আগেও বাজারে ১৮০-২২০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কেনা যেত। গত সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টির মধ্যে বাড়তে থাকে মরিচের দাম। রবিবার খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা। শুধু মরিচ আর ডিম নয়, বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে। 

যানজটের বিরতি নেই
সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি শুক্র-শনি, তার আগের দিন ঢাকা যানজটে যুগপৎ স্থবির ও অস্থির হয়ে পড়ে। মহানগরীর বড় একটি অংশ ঢাকার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করে। আরেক দল বিনোদন সন্ধানী। এসব দেখেশুনেই রসিকজনেরা এখন বৃহস্পতিবারকে ‘বেহুঁশপতিবার’ বলে অভিহিত করে থাকে। ঢাকায় দেড়-দু’কোটি নাগরিকের ছোট একটি অংশও যদি কর্মব্যস্ত থাকে, কাজের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয় তাহলেও যানজট সৃষ্টি হতে পারে শুক্র-শনিবার ছাড়াও সপ্তাহের অন্য যে কোনো ছুটির দিন। স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে, শুক্র-শনি দু’দিন সরকারি অফিস আদালত ছুটি মানে গায়ে গা ঘেঁষা এ মহানগরীর রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যাবেÑ এমন চিন্তা বহুকাল হলো জলাঞ্জলি দিয়েছে ঢাকাবাসী।

ওই দু’দিন বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি সড়কে ও বিপণি বিতানগুলোতে মানুষের এতটাই উপচে পড়া অবস্থা হয় যে মনে হবে এদিন ঢাকায় কোনো বিশেষ উপলক্ষ রয়েছে।
যানের আধিক্য সম্পন্ন ঘনবসতিপূর্ণ একটি মহানগরীতে যানজট এড়ানোর সহজ উপায় নেই। তবু কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার যান চলাচলের ধীরগতির নেপথ্যে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে থাকে। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ না ঘটায় দশকের পর দশক ধরে বাড়তে বাড়তে ঢাকার জনসংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সড়কের ওপর চাপও বাড়ছে। বিশ্বে যানজটের সূচকে ঢাকার অবস্থান পাঁচ নম্বরে। ঢাকার পরেই আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি।

সিপিডির এক গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন ঢাকার নাগরিকদের সড়কে প্রতি ঘণ্টায় ২৩ মিনিট যানজটে আটকা থাকতে হয়। যেদিন জনগণ রাস্তার আইন মানবে, ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ না খেয়ে রাস্তায় ঠিকঠাক যানজট কমানোর কাজ করবে, চালকগণ ট্রাফিক নিয়ম মেনে রাস্তায় পরিবহন চালাবেÑ সেদিনই রাজধানী ঢাকার যানজট কমে আসবে। ঢাকা থেকে ছোট যানবাহন কমানো চাই। ঐতিহ্যবাহী মহানগরী ঢাকা যানজটের শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করুক, এটা কে চায়।
ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে ঢাকা যানজট নিরসন কমিটি। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছেÑ ঢাকা শহরের ভেতরে ও চারপাশে যেসব খাল রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করে নৌপথ সচল করা; চারপাশের নদীঘেঁষে ট্রাম রোড বা সংক্ষিপ্ত রেলপথ  তৈরি এবং ওই রেলপথ ঘেঁষে চক্রাকার সড়ক নির্মাণ।

যানজট নিরসনে অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ঢাকার অভ্যন্তরে থাকা বাস টার্মিনালগুলোর স্থানান্তর, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইন উড়ালপথে করা অথবা প্রতিটি রেলক্রসিং বাইপাস করে দেওয়া, কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর দুটি অঞ্চলে ভাগ করে কারাগার ও আদালত ভবন এক জায়গায় করা, ঢাকা থেকে অন্তত ১০০ কিলোমিটার দূরের। এ ছাড়া ঢাকার ভেতরের ফুটপাত ও সড়কগুলো হকার এবং ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দখলমুক্ত করা, ট্রাফিক পুলিশ ও যানবাহনের চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ট্রাফিক-ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, নগর পরিবহন চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

অক্টোবরেও জলাবদ্ধতা 
আশ্বিনের বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতাসহ যানজটে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। ঝুম বৃষ্টির সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয় বজ্রপাত। বৃহস্পতি-শুক্রবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিও ডুবে যায়। ফুটপাতেও জলাবদ্ধতা। শনিবার টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীর পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, সচিবালয়ের সামনে আবদুল গণি রোড, প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা, সেগুনবাগিচা, নাইটিঙ্গেল মোড়, পল্টন, কাকরাইল, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, মোহাম্মদপুর, ইসিবি, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেটের নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ী থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, শনিরআখড়ার সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো এলাকার নিম্নাঞ্চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রমতে, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটি অন্তত ১২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিগত অর্থবছরে একই কাজের জন্য আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বছর বছর এত টাকা খরচ করার পরও জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় বিষয়টি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রচুর আলোচনা হয়েছে।

জনকণ্ঠ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পুরো পাতা সচেতনতা ও সুপারিশধর্মী অভিমতও প্রকাশ করেছিল কয়েক বছর আগে। মুশকিল হলো পরিকল্পনা ও আন্তরিকতার অভাব থেকেই যাচ্ছে। ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নিয়ে আগে মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) তৈরি করতে হবে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না করেই বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হচ্ছে। তাই কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না ঢাকাবাসী। জলাবদ্ধতার অবসান হবে কবে?

শব্দদূষণে জরিমানা
পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা শহরকে হর্নমুক্ত করতে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে, পরে পুরো ঢাকা শহর এবং ধীরে ধীরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও শব্দদূষণ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইউএনবিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ পরিকল্পনা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জানান, হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণে বিধিতেও পরিবর্তন আনা হবে। হর্ন বাজানোর দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তন করতে প্রথমে মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন। এরপর আইনের প্রয়োগ।

জরিমানা কার্যকর করার আগে সব ধরনের গাড়িচালক ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হবে। উপদেষ্টা বলেন, হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করতে ডিসেম্বর থেকে জরিমানা কার্যকর করা হবে। প্রথমবার আইন ভঙ্গ করলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। দ্বিতীয়বার করলে আরও বেশি টাকা জরিমানা করা হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, (ট্রাফিকে) লাল বাতি থেকে সবুজ বাতি এলেই সব গাড়ি হর্ন বাজানো শুরু করে। এটা উচিত নয়। হর্ন বাজানোর আগে ভাবতে হবে, এটি জরুরি কি না। এদিকে ১ অক্টোবর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই এলাকায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হর্ন বাজালে কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে।

সুপারশপে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ 
সুপারশপে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ১ অক্টোবর থেকে; একমাস পরে সব ধরনের বিপণি বিতানেই এটি কার্যকর করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম দিন মঙ্গলবার স্বপ্ন সুপারশপের গুলশান আউটলেটে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ চালু উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। পরিবেশ সবার আগে। তিনি বলেন, পাটের ব্যবহার দেশব্যাপী বাড়াতে হবে।

এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, পলিথিন বন্ধে ২০০২ সাল থেকে আইন রয়েছে। রাজধানীর সুপারশপে এখন পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে কাগজ, পাট ও কাপড়ের ব্যাগে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। তবে আগে বিনামূল্যে পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হলেও এখন পাট বা কাপড়ের শপিং ব্যাগের জন্য নেওয়া হচ্ছে মূল্য। সুপারশপ কর্তৃপক্ষ বলছেন, কেনা দামে এসব ব্যাগের মূল্য রাখা হচ্ছে। আর মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ বলছেন, পরিবেশের স্বার্থে কিছুটা বাড়তি খরচ করতে সমস্যা নেই। আবার কেউ বলছেন, বিকল্প এসব ব্যাগের দাম বাড়তি খরচ যোগ করছে ক্রেতার ওপর। ফলে সহজলভ্য ও সস্তায় বিকল্প পণ্য সরবরাহে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

পূজার শুরুতেই স্মারকলিপি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, পূজাম-পে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই; দুর্গাপূজা এবার ভালোভাবে নির্বিঘেœ এবং শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হবে। এ বক্তব্যের পরও দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুর এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে স্মারকলিপিতে।

রোববার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারী, উসকানিদাতা ও সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সারা দেশে দুর্গাপূজা যেন শাস্ত্রীয় পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সে বিষয়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

কবি আসাদ চৌধুরী স্মরণ
কবি আসাদ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী গত রবিবার চলে গেল অনেকটা নীরবে। কবির কোনো কবিতা পড়ার আগেই আমার কাছে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তাঁর বাচন-উচ্চারণের শুদ্ধতার কারণে, বিটিভির সাদাকালো যুগে তাঁর প্রচ্ছদ অনুষ্ঠানটি সুযোগ পেলেই দেখতাম। হয়তো তখন থেকেই আমার ভেতরে বিটিভির একজন অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী ও উপস্থাপক হওয়ার শখ জেগেছিল। আসাদ ভাইয়ের বিদায়ের সংবাদ শুনে প্রথমেই যে কথা মনে এসেছিলো সেটি হলো আমাদের কবিতার ষাটের দশকের সমৃদ্ধ ভুবনের বাসিন্দাদের কে আর বাকি রইলেন বিদায় নিতে! আর আজকাল কি আশি চলে যাওয়ার মতো কোনো বয়স?
আমার চেয়ে সিনিয়র প্রায় সব সুপরিচিত কবির কবিতা সম্বন্ধে আমার ছোট বা বড় লেখা আছে। আসাদ ভাইয়ের ‘নদীও বিবস্ত্র হয়’-এর রিভিউ লিখেছিলাম। হাতের কাছে পেলে উদ্ধৃতি দিতাম। তিনি আমাকে পরোক্ষভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। যেমন, কানাডায় আমার নিকটাত্মীয়দের কাছে আমার সম্পর্কে আমার কবিতা সম্পর্কে উদার প্রশংসা করেছেন। একেবারে নবীন বয়সে একুশের ভোরে বাংলা একাডেমি মঞ্চ থেকে কবিতাপাঠ শেষে নেমে এলে তিনি কাছে এসে বলেছিলেন, আমি অন্যদিকে ছিলাম। মাইকে আবৃত্তি শুনে দেখতে এলাম ছেলেটা কে? 
তাঁকে কখনো বলা হয়নি যে, আমাদের একশ’ জন কবি কবিতা পাঠ করলে ৯৮ জনেরটাই হয় আঞ্চলিকতার টানে অবিশিষ্ট, কিংবা ভুল উচ্চারণে বা পড়ার ভঙ্গিতে শ্রুতিবিব্রত। সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। না বললেও তিনি নিশ্চয়ই এ বিষয়ে সচেতনই ছিলেন। 
এ সামান্য শ্রদ্ধাঞ্জলির সঙ্গে দিচ্ছি লন্ডন থেকে কেনা আমার সস্তা ফোন নকিয়া লুমিয়ায় তোলা দুই কবি : আসাদ চৌধুরী ও রুবী রহমানের ছবি। ঠিক এগার বছর আগে অক্টোবরেই তোলা। ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছিলাম: সন্ধ্যায় পাবলিক লাইব্রেরিতে শরতের কবিতা পড়তে যাই ‘ঘাসফুল’-এর আমন্ত্রণে। বহুকাল বাদে একসঙ্গে অনেক অগ্রজ কবির সান্নিধ্য লাভ। ভালো লাগছিল। আমি কোনোমতে ‘ট্রেন ছুঁতে’ পেরেছিলাম। রুবী আপা আসেন আমারও পরে। চোখে চোখ পড়তেই বললেন, ‘তোমাকে দেখে আমার খুব রাগ হচ্ছে, মারুফ।

কোনো যোগাযোগ করো না!’ আপার জীবনের ওপর দিয়ে কেয়ামত বয়ে যাওয়ার পর তাঁর সামনে আর দাঁড়াতে পারি না। সে কত বছর হলো! মাথা নিচু করে বললাম, ‘সাজি, তুমি কি এখান থেকে বাসায় ফিরবে? নাকি অন্য কোনো প্রোগ্রাম আছে?’ তিনি বাসাতে ফিরলে সঙ্গে যেতে চাই। বাসা মানে সংসদ ভবনের উল্টোদিকে সংসদ সদস্যদের বাসভবন (তখন তিনি এমপি)। তাঁর গাড়িতে আসাদ ভাইও উঠলেন, বাড়ির পথে অনেকটা এগুনো যাবে বলে। তারপর থেকেই কত না হাসি আর গল্প, স্মৃতিচারণ। শেষ পর্যন্ত রুবী আপার বসার ঘর পর্যন্ত সেই অসামান্য মধুরতা টেনে নিয়ে যাওয়া। 

০৬ অক্টোবর, ২০২৪

[email protected]

×