সম্পাদকীয়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানসহ যাবতীয় ব্যয় বহন করছে সরকার। এমন একটি সিদ্ধান্তের পর স্বস্তি পেয়েছিল সমাজ। কিন্তু এরই মধ্যে নানা সংকটের কথা শোনা যাওয়ায় আহতরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় রয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত অনেক ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, দিনমজুর, সাধারণ মানুষ ও তাঁদের পরিবার। তাঁদের কারও হাত কাটা গেছে, কারও পা। অনেকেই চোখ হারিয়েছেন। কারও এক চোখের আলো নিভে গিয়ে, অন্য চোখেও কম দেখছেন। বাকশক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন কেউ। অনেকেই চিকিৎসার জন্য সরকারি কোনো সহায়তা এখনো পাননি বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, আহত এসব মানুষের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার। বাস্তবে টানাটানির সংসারে তাঁদের চিকিৎসা অনেকটা অনিশ্চিত। পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত মানুষগুলোর বেদনাবিধুর কাহিনী জেনেছেন সাংবাদিকরা। এমন একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকে গত শনিবার, যা মনোযোগ সহকারে পাঠ করলে চোখ ভিজে ওঠে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত তিন শতাধিক ব্যক্তি এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আশার কথা হলো, এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে যুক্তরাজ্য ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় এসেছে। চোখে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্যও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসছেন। ইতোপূর্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা। বাস্তবতা হলো, আহত ব্যক্তিদের অনেকের দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা প্রয়োজন হবে। একেক পর্যায়ে একাধিক অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। হাসপাতালে থাকা পর্যন্ত রোগীরা সেবা পাচ্ছেন। যদিও এসব রোগীর জীবনভর কিছু না কিছু জটিলতা থাকবে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন ‘এম্পাওয়ারিং আওয়ার ফাইটার্স’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আহত ব্যক্তিরা সরকারের কাছে তাঁদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। আহত রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য একটি ‘জরুরি হটলাইন সেবা’ চালু করার দাবিও উঠেছে।
এসব দাবির যৌক্তিকতাও রয়েছে। দুইমাসের বেশি সময় ধরে যারা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন, তাদের ভেতর অভিমান ও ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়। আমরা মনে করি, আহত ব্যক্তিদের সুস্থতা নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘ সময় ধরে পাশে থাকার অঙ্গীকারই তাদের স্বস্তি দিতে পারে। এজন্য সরকারের জরুরি ভিত্তিতে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।