ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

বিদায় ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৬ অক্টোবর ২০২৪

বিদায় ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী

সম্পাদকীয়

চলে গেলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। শুক্রবার রাত সোয়া তিনটার দিকে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন)। তার জীবন ছিল বর্ণাঢ্য ও ঘটনাবহুল। দেশের স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন আপোসহীন ও সাহসী যোদ্ধা। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন দেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও গভীর শোক  প্রকাশ করেছেন। শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি একনিষ্ঠতা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। সংসদে তার বক্তৃতা সব মতের রাজনীতিবিদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। তার মৃত্যুতে জাতি একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদকে হারাল। 

ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন কৃতী ছাত্র। ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো এবং এফআরসিপি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিটিভিতে তার ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠান ছিল খুবই জনপ্রিয়। সফল পার্লামেন্টারিয়ান বদরুদ্দোজা চৌধুরী জাতিসংঘে তিনবার বক্তব্য দেন। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বহু গ্রন্থের প্রণেতা।
কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রে, রাজনীতিতে, সরকারে এবং সংসদে নানা পরিবর্তন খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি ছিলেন জাতীয় রাজনীতির একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক জীবনে একজন সুদক্ষ সংগঠক ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে তার বর্ণাঢ্য জীবন অনুপ্রেরণা জোগায়। জনকণ্ঠ পরিবার তার মৃত্যুতে শোকাহত। আমরা তার শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।

×