ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৬ অক্টোবর ২০২৪

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক

সম্পাদকীয়

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসেন গত শুক্রবার। এদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত একান্ত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। উল্লেখ্য, ড. ইউনূস সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পুরনো বন্ধু হিসেবে স্বাগত জানান। তাঁরা পরস্পর চার দশকের বেশি সময় ধরে একে অপরকে চেনেন। পরে রাজধানীর একটি হোটেলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথভাবে তারা সংবাদ সম্মেলন করেন। দুই দেশের মধ্যে মূলত রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

এর পাশাপাশি সমধিক গুরুত্ব পেয়েছে সে দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানি এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়টি। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও আন্তর্জাতিক সমাধানের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, এই সমস্যার সমাধান আন্তর্জাতিক মহলের হাতে, বাংলাদেশের একার নয়। এটি একটি টাইম বোমা, যেটির যে কোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারে। কাজেই দ্রুত সমাধান আবশ্যক। ড. ইউনূস জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া এই সমস্যা সমাধানের জন্য আসিয়ান ও আন্তর্জাতিক ফোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আসিয়ানের পরবর্তী সভাপতি হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। 

এর বাইরে সমধিক গুরুত্ব পেয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের শ্রমবাজারের প্রসঙ্গটি। সে দেশে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রারহিম বলেছেন, তাঁর সরকার সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ১৮ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিককে সে দেশে যাওয়ার বিষয়ে মনোযোগ দেবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশী কাজ করেন মালয়েশিয়ায়। এর মধ্যে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত অভিবাসী হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। তখন সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় এবং বিমানের টিকিট না পাওয়ায় প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক যেতে পারেননি। এবারে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী বা বিদেশী কারও অপরাধমূলক কর্মকা-কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। 
দুঃখজনক হলো, শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট এবং অধিকার লঙ্ঘনের মতো নানা অভিযোগের ভিত্তিতে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়া। চলতি বছরের ৩১মে ছিল ঢাকার শাহজাজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের জন্য নির্ধারিত শেষ ফ্লাইট। এদিন বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে এবং বাইরে হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমজীবী শেষ ফ্লাইট ধরার জন্য অধীর আগ্রহে প্রবল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটিয়েছেন কয়েকদিন। তাদের জন্য বিমানের টিকিট প্রাপ্তিও ছিল দুর্লভ ও সোনার হরিণ তুল্য।

৬০ হাজার টাকার টিকিটের দাম উঠেছে লক্ষাধিক। তাও টিকিট মেলেনি। ফলে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে অপেক্ষমাণ শ্রমজীবীদের হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাসে। এক্ষেত্রেও ছিল টিকিট সিন্ডিকেটের আধিপত্য। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও শ্রমশক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ ছিল নির্বিকার ও নির্দয়। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব সিন্ডিকেটের কাছে সরকারও যেন অসহায়। প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে মালয়েশিয়ায় যেতে। তবে ঢাকায় এবারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ফলপ্রসূ সফরের প্রেক্ষাপটে সেদেশের শ্রমবাজার অবিলম্বে খুলবে বলেই প্রত্যাশা।

×