সম্পাদকীয়
শব্দদূষণ রাজধানী ঢাকার অন্যতম একটি সমস্যা। সম্ভবত বায়ুদূষণের পরেই এর অবস্থান। ধূলিদূষণ, ধোঁয়াদূষণ, জলাবদ্ধতা প্রভৃতিও ঢাকার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। তবে বর্ষা মৌসুম ও বৃষ্টিপাত বেশি হলে ধূলিদূষণ কিছুটা হলেও কম থাকে। জলাবদ্ধতাও প্রধানত অতিবৃষ্টির কারণে হয়ে থাকে। তখন বায়ুদূষণও থাকে কিছু কম। কিন্তু শব্দদূষণ চলতেই থাকে বছর ধরে। ঢাকা এমনিতেই জনসংখ্যাবহুল। তদুপরি যানবাহনের প্রচ- চাপ ও যানজট। যে কারণে রাজধানী ঢাকার আরও একটি বিশেষ পরিচিতি রয়েছে ভয়াবহ যানজটের শহর হিসেবে। এ প্রেক্ষাপটে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ শুধু কান ঝালাপালাই করে না, বধির তথা শ্রবণশক্তি হারানোর জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ ইত্যাদি সৃষ্টিতেও সহায়ক।
সেসব বিবেচনায় রেখে পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকাকে হর্নমুক্ত তথা শব্দদূষণমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আপাতত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যেমন হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সচিবালয় এলাকায় শব্দদূষণ নিষিদ্ধ করা হবে। পরে পুরো ঢাকা শহর ও বিভাগীয় শহরে শব্দদূষণ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ কথা জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজোয়ানা হাসান। ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন কিলোমিটার এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে।
সেখানে হর্ন বাজালে কারাদ- ও জরিমানা হতে পারে। যানবাহনের চালক ও সহকারী এবং জনসাধারণকে শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে। এর পর হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর করা হবে জরিমানার বিধান।
শব্দদূষণ এক ধরনের মারাত্মক পরিবেশ দূষণ। আমাদের সঠিক অনুধাবনের অভাবে দিন দিন এই দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অনেক পরিবেশবাদী বাংলাদেশের শব্দদূষণের বর্তমান পর্যায়কে ‘শব্দসন্ত্রাস’ নামে অভিহিত করেছেন। এই ‘শব্দসন্ত্রাস’ মাথাব্যথার কারণ। দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বে বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় বাংলাদেশ আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এর অন্যতম প্রধান কারণ শব্দদূষণÑবায়ুদূষণ। তবে দূষণ এখন ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সমন্বিত একটি অংশীদারিমূলক কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে, বিশেষ করে আটটি বিভাগীয় সদরে শব্দদূষণের পরিমাপ করেছে। সেখানে দেখা যায়, শব্দদূষণের জন্য মূলত গাড়ির হর্ন সবচেয়ে বেশি দায়ী। ঢাকা শহরের এমন কোনো রাস্তা পাওয়া যাবে না, যেখানে শব্দের মাত্রা ওই এলাকা বা বাণিজ্যিক এলাকার শব্দের নির্দিষ্ট মাত্রার ভেতরে থাকে। ২০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা হলেই আমরা সেটি শুনতে পাই। এর কম হলে পারি না। উল্লেখ্য, ২০ থেকে ২০ হাজার হার্জ পর্যন্ত শব্দ আমরা শুনতে পারব। এর চেয়ে বেশি হলে আমাদের শ্রবণশক্তি হতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত।
বাংলাদেশের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা (২০০৬) অনুযায়ী নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, শিল্প এলাকা ও মিশ্র এলাকা- এই পাঁচটি জোনে দিন ও রাতে আলাদা করে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা আছে। সেক্ষেত্রে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ও জরিমানা বিধানের আইন শুধু করলেই হবে না, কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করে তা বাস্তবায়নের দাবি রাখে।