ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

আশ্বিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ৫ অক্টোবর ২০২৪

আশ্বিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা

সম্পাদকীয়

আশ্বিনের বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতাসহ তীব্র যানজটে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। একটানা ঝুম বৃষ্টির সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয় বজ্রপাত। তিনদিন ধরে দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। কখনো থেমে থেমে, কখনো ঝুমবৃষ্টি, কখনো আবার ঝিরিঝিরি। এতে নগরীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিও ডুবে গেছে। রাতে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে অনেকেই পড়েছেন ভোগান্তিতে। খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, অফিসগামী যাত্রী ও পথচারীরা হয়েছেন নাকাল।

পথে পথে যানবাহন নষ্ট। লম্বা যানজট, হেঁটে গন্তব্যে যেতেও নানা ভোগান্তি। ফুটপাতেও জলাবদ্ধতা। নগরীর নিচু এলাকা তলিয়ে আছে পানিতে। সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রাজধানীবাসী। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি থামার সম্ভাবনা নেই। কম-বেশি বৃষ্টিপাত হবে প্রতিদিনই। বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা হলে বৃষ্টির প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। অক্টোবর মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের হার ১৬০ দশমিক ৩ মিমি। এবার মাসে ৭-৮ দিনের বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের হারের চেয়ে আরও বেশি হতে পারে।
টানা বৃষ্টিতে ঢাকাবাসীর যে দুর্ভোগ, তা ভাষায় প্রকাশের নয়। নানা সমস্যা ও চাপে ভারাক্রান্ত ঢাকা এবারও বৃষ্টিতে ডুবতে বসেছে। টাকার অপচয় কিংবা বিনষ্টি বোঝাতে আমরা বলে থাকিÑ টাকা জলে গেল। ঢাকার জলাবদ্ধতার জলেও যে বিপুল অঙ্কের টাকা অদৃশ্য হতে পারেÑ এটি কি ঢাকাবাসী আগাম আন্দাজ করেছিলেন! এখন হিসাব নিতে বসে দেখা যাচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা একরকম জলেই গেছে।

গত দেড় দশকে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা ওয়াসা এবং অবিভক্ত ও বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশন। করপোরেশন দুটি মহানগরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রায় ১০ শতাংশ খরচ করেছে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে। জলাবদ্ধতা কমেনি একটুও। বর্ষায় জলাবদ্ধতা রাজধানীর একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার শরতেও ঢাকা ডুবত। 
আধুনিক নগরীতে জলাবদ্ধতার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকার জলাধার, জলাশয় হিসেবে ঝিল ও খালের কার্যকারিতা বিগত দশকগুলোতে ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে দখল-দূষণের কারণেই। এটি যে কত বড় অপরিণামদর্শিতা এবং আত্মঘাতী কার্যকলাপ সেটি নগরবাসী প্রতিবছরই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। এর ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটছে মারাত্মকভাবে। অপরদিকে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার পথ অবরুদ্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতা ও জলজট হয়ে উঠেছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা স্বরূপ।

খালগুলো যেন যত খুশি যেভাবে খুশি বর্জ্য ফেলার স্থান। সব মিলিয়ে ঢাকার অধিকাংশ খালই মরণ দশায় নিপতিত। এসব খাল ভরাট করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। রাজধানীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে হলে খালগুলোয় টেকসই পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। খালগুলোকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণও করতে হবে, যাতে কেউ দখল বা ভরাট করতে না পারে। একইসঙ্গে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাও আধুনিক করা জরুরি।

×