ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

অভিভাবকহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ২০:০১, ৪ অক্টোবর ২০২৪

অভিভাবকহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

.

শিক্ষাদান মানুষের পরম সেবা। একজন শিক্ষক মানুষের অন্ধকার দূরীভূত করে আলো দান করেন। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। মা-বাবার পরই আমাদের জীবনে শিক্ষকের অবস্থান সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পিতা-মাতা সন্তানের জন্ম দেন আর শিক্ষক তাদের জ্ঞান চক্ষু উন্মিলন করে আলোকিত মানুষ গড়েন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চালানোর ক্ষেত্রে যেমন দক্ষ পরিচালক আবশ্যক, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায়ও প্রয়োজনীয় শিক্ষক আবশ্যক। সম্প্রতি জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাজধানীসহ ঢাকা অঞ্চলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো প্রধান বা অভিভাবক নেই।

মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নেই সেই তালিকায় দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত ৮৮জন প্রতিষ্ঠান প্রধান স্কুল-কলেজে আসছেন না। দোহার থানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক পদে কেউ নেই। কেরানীগঞ্জ থানায় সংখ্যা , নবাবগঞ্জে ১২, মোহাম্মদপুরে , ধানম-িতে , লালবাগে , শাহআলীতে , মিরপুরে , কাফরুলে , পল্লবীতে , কতোয়ালিতে , গুলশানে , ক্যান্টনমেন্টে , রমনায় , বাড্ডায় , উত্তরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত। সব মিলিয়ে উপজেলা পর্যায়ে ২১ মহানগরীতে ৬৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের এমন অবস্থা রয়েছে। ধামরাই, সাভার, ডেমরা মতিঝিল থানার পরিসংখ্যান এখনো মেলেনি। এই চার থানার তথ্য পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠানে প্রধানের সংকট শতাধিক হতে পারে। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রায় প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্দোলন, শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে অস্থিরতা চলছে। ফলে এর মধ্যে কাউকে জোরপূর্বক অবসর দেওয়া হয়েছে, কেউ আবার ছুটিতে চলে গেছেন।

বিগত সরকার পতনের পর থেকে কারও কারও এখনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতেঅভিভাবকহীনহয়ে পড়া ঢাকার অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষা প্রশাসনিক কার্যক্রমে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় শিক্ষার্থীদের বেতন বিড়ম্বনাও সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অরাজকতা বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছে। তাতেও সমাধান না হওয়ায় সর্বশেষ জোরপূর্বক অপসারণ করা যাবে না এমন শর্তে প্রজ্ঞাপনও জারি করে।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত। শিক্ষকগণ পরোক্ষভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করলে কিংবা আনুগত্য প্রদর্শন করলে সেটি শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে প্রভাবিত করবে, এটাই স্বাভাবিক। সেইসঙ্গে এসবের নেতিবাচক প্রভাব মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের অন্তরায়। একথা সত্য শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের এখনো অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অনেক কিছুই প্রত্যাশার সঙ্গে হয়তো মেলানো যাচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য অভিভাবকহীন থাকতে পারে না। এমন পরিস্থিতি দেশের শিক্ষাখাতের উন্নয়নে সহায়ক নয়। কাজেই অভিভাবক শিক্ষার্থীসমাজের কাছে, তথা সার্বিক বিচারে যথাসম্ভব গ্রহণযোগ্য, সৎ যোগ্য ব্যক্তিত্বকেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে নিয়োগদান বাঞ্ছনীয়।

×