ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

শেয়ার কারসাজি

-

প্রকাশিত: ২০:২৬, ৩ অক্টোবর ২০২৪

শেয়ার কারসাজি

সম্পাদকীয়

বহুল আলোচিত দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজির বিষয়টি এবার সামনে এসেছে। বেক্সিমকো গ্রুপ নামে-বেনামে বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) খুলে ঘটিয়েছে এই কারসাজি তথা কেলেঙ্কারির ঘটনা। শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠান। কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে এরপর শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা লুটে নিয়েছে তারা।

এর বাইরে একই শেয়ারে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ী মুনাফার (আনরিয়ালাইজড গেইন) পরিমাণ ছিল ১ হাজার পাঁচশ’ ১২ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে ঘটে এই কারসাজির ঘটনা। যা হোক, কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা মুনাফা তুলে নেওয়া চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ারবাজারে কোনো একক কোম্পানির কারসাজির ঘটনায় এটি এখন পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ জরিমানা।

গণমাধ্যমে এই চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানাও এসেছে। তবে শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তথা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারসাজির সঙ্গে যুক্ত উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বেক্সিমকো গ্রুপেরই সুবিধাভোগী। উক্ত গ্রুপের শেয়ার নিয়ে কাজ করেন এমন এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ও ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে এই লেনদেন করতেন। তদুপরি এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজিতে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে জনতা ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে।

উল্লেখ্য, জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বড় গ্রাহক বেক্সিমকো গ্রুপ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসন আমলের প্রায় পুরোটা সময় জনতা ব্যাংকে নিরঙ্কুশ আধিপত্য ছিল সালমান এফ রহমানের হাতে, যিনি কার্যত বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক। 
বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারি তথা কারসাজির অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। দুঃখজনক হলো, এসব বিষয়ে তৎকালীন বিএসইসির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর বিএসইসি পুনর্গঠিত হলে এসব ঘটনার ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। তবে শেয়ার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শুধু বিও হিসাব কারসাজির ভিত্তিতে যথাযথভাবে চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিদের জরিমানা করা হলে তা আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

সেক্ষেত্রে জরিমানা আদায় ও কারসাজির মাধ্যমে জড়িত প্রকৃত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা আবশ্যক। যেসব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ব্যাংক হিসাবের তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে কাজটি যথাযথভাবে করা সম্ভব। বর্তমান বিএসইসি কর্তৃপক্ষ তা করতে সক্ষম হবে বলেই প্রত্যাশা।
সর্বশেষ, রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে কর দেওয়া নিশ্চিত করতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত বেক্সিমকোসহ ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার স্থানান্তর  (কেনাবেচা ও দান) বন্ধ করতে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অন্য ৬টি কোম্পানি হলোÑ বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড। মূলত এসব কোম্পানির কর ফাঁকি অনুসন্ধান করতেই এনবিআরের এই নিষেধাজ্ঞা।

×