সম্পাদকীয়
দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করে আইন হয়েছে ২০০২ সালে। কিন্তু সেই আইন আলোর মুখ দেখেনি ২২ বছরেও। অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। দেশের কোনো সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ রাখা যাবে না। এর পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ১ নভেম্বর থেকে ঢাকার ১০টি কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে শুরু হবে কার্যক্রম। দেশব্যাপী পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এটি অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় এর পরিত্যক্ত অংশ মাটির অভ্যন্তরে ঢুকে মাটির উর্বরতা হ্রাস ও মাটিতে থাকা অণুজীবগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। পলিথিন মাটির গুণাগুণ নষ্ট করার পাশাপাশি বিপন্ন করে তুলছে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকেও। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজধানীর ৬৪ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে।
শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। অপচনশীল ও ক্ষতিকর পলিথিনের বিপুল ব্যবহারের ফলে বিশেষ করে বর্ষাকালে নগর-মহানগরে পয়োনিষ্কাশনের ড্রেন, নালা, নর্দমা, খাল, বিল ও নদীগুলো ভরাট হচ্ছে আর দূষিত হচ্ছে পানি। পলিথিন নদী ও সাগরের তলদেশে জমা হয়ে জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক জীবের মারাত্মক ক্ষতি করছে। মাছ-মাংস পলিথিনে প্যাকিং করলে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়। এতে রেডিয়েশন তৈরি হয়ে খাবার হয় বিষাক্ত।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, পলিথিন ব্যাগ অবাধ ব্যবহারের ফলে চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুজনিত রোগ ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের সংক্রমণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন বলেছেন, ২০১৬ সালে মস্তিষ্কে যে পরিমাণ প্লাস্টিক কণা পাওয়া গিয়েছিল, ২০২৪ সালে তা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, অনেক দেশে তা ১০ মাসেও হয় না। এর প্রয়োজনীয়তা যদি পাটজাত পণ্য দিয়ে মেটানো যায়, তবে প্রসার ঘটবে পাট শিল্পের। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ বা ঠোঙাÑ এসবের ব্যবহার সহজলভ্য করতে হবে। দেশে কোনোভাবেই পরিবেশ দূষণকারী পলিথিন যেন উৎপাদন না হয়, সেদিকে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেই প্রত্যাশা। পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে সারাদেশে ক্যাম্পেন, মাইকিং অথবা লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে।
পরিবেশ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হলে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। তাই নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি। ২০২৪ সালে এসে কেউই প্লাস্টিক এড়িয়ে চলতে পারেন না। যেমনÑ প্লাস্টিক নেই, এমন মুঠোফোন বা কম্পিউটার পাওয়া যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর সংস্পর্শে আসা কমানো যেতে পারে, যেমনÑ প্লাস্টিকের ব্যাগ ও বোতলের ব্যবহার কমিয়ে। পলিথিন নিষিদ্ধ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হওয়া একান্ত প্রয়োজন।