ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১

মবসন্ত্রাস!

ইমরান লস্কর

প্রকাশিত: ২১:১১, ২ অক্টোবর ২০২৪

মবসন্ত্রাস!

স্বৈরশাসনে দেশের সকল মানুষ অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার হয়েছে

গত ষোল বছরের স্বৈরশাসনে দেশের সকল মানুষ কোনো না কোনোভাবে অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার হয়েছে। বিচারবহির্ভূত প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, গুম, আয়নাঘরে নির্যাতন এবং ক্রসফায়ারের নামে টার্গেট কিলিংয়ে হত্যা হয়েছে শতশত নিরপরাধ মানুষ। দেশে ফের এই কালো অধ্যায় প্রতিষ্ঠিত হোক, জনগণ তা চায় না। জনগণ চায় আইনের শাসন, জনতার প্রশাসন। তাই, এই সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অভ্যন্তরীণ সিস্টেমকে যথাসম্ভব সংস্কার করে দেশকে দ্রুততম সময়ে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এই সহজ সমীকরণের যাত্রাপথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে একদল উত্তাল জনতা।

বিভিন্ন সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৪০ দিনে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত ২৪জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হইচই কা- পড়ে যায়, যখন দেশের দুইটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বয়ং মেধাবী শিক্ষার্থীরা অভিন্ন রাতে দুজন মানুষকে হত্যা করে। ঢাবির তোফাজ্জল, জাবির শামীম হত্যার কয়েকদিন আগে রাজশাহীর বিনোদপুরে জনতার পিটুনিতে মারা যায় মাসুদ নামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।

তখনই প্রশ্ন জাগে, স্বৈরশাসনে স্বৈরাচার টিকিয়ে রাখতে গুম, খুন, হত্যা করলেও এই নতুন বাংলাদেশে ছাত্রদের হাতে খুনের রক্তের বদলে আদতে কী কায়েম করতে যাচ্ছে? যে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ষোল বছরের ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, তাদের হাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কী করে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা?  
মব হলো উত্তাল একদল জনতা। দেশের প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে উত্তাল জনতা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে সন্দেহজনক কাউকে হত্যা করাকে সাধারণত মব জাস্টিস বলা হয়।

এখানে শব্দের ব্যবহারের মধ্যেও গুরুতর একটা আপত্তি রয়েছে।  যেখানে মব নিজে আইন হাতে তুলে নেয়, সেখানে জাস্টিস না হয়ে ইনজাস্টিস বলাটা বোধহয় বেশ যুতসই হবে। এই মব ইনজাস্টিস রুখতে না পারলে চব্বিশের এই আন্দোলনের স্পিরিট হয়তো বেশিদিন টিকে থাকবে না। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দেশে অনিয়মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা জারি থাকলে এবং বিচারকার্য সম্পন্নকরণে কালক্ষেপণ করলে, জনতা মব হয়ে ইনজাস্টিস করে ফেলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই হীন কাজ কীভাবে করল? তার প্রতিরোধে সমাধান কী।

যারা মব করে তাদের মনে বসবাস করে হিং¯্র-সহিংসতা, তাদের  মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের বড় অভাব। বড় বড় শিক্ষালয়ে পাঠ্যপুস্তক পড়ে শিক্ষিত হলেই মানবিক গুণ বিকশিত হয় না, সামাজিক মূল্যবোধ আত্মস্থ হয় না। তার জন্য দরকার ধর্মীয় অনুশাসন, সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং সমাজ ও পরিবারের প্রত্যেকটা সংস্কৃতিতে মানবিকতার উপস্থিতি নিশ্চিত করা। মানুষের মনে ন্যূনতম মানবিকতার রেশ গেঁথে দিতে পারলেই কেবল সম্ভব এই হীন হত্যাযজ্ঞÑ মব ইনজাস্টিস বন্ধ করা। অন্যথায়,  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যে সংস্কার কাজ চলছে তা ব্যাহত, প্রশ্নবিদ্ধ ও অনিশ্চিত থেকে যাবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

×