ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১

খাল উদ্ধার অভিযান 

প্রকাশিত: ২০:৩২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খাল উদ্ধার অভিযান 

সম্পাদকীয়

দখল ও দূষণের কারণে ঢাকার জলাভূমি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এক সময় ঢাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূলে ছিল শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা খালগুলো। এসব খাল নগরীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। কয়েক দশক আগেও ঢাকার যেসব খালে ছিল পণ্যবাহী বড় বড় নৌকার আনাগোনা, সেগুলো এখন দুই-আড়াই ফুট চওড়া নর্দমার আকার ধারণ করেছে।

অত্যধিক পরিমাণে বর্জ্য ফেলা, প্রভাবশালীদের দ্বারা ভরাট করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারণে ঢাকার অধিকাংশ খালই বর্তমানে মৃতপ্রায়। সম্প্রতি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ১৯৬৭ সালে ঢাকা শহর নীল এলাকা ছিল ২৬ শতাংশ, সবুজ স্থান ছিল ৪৪ শতাংশ এবং শহুরে এলাকা ছিল ৩১ শতাংশ। ২০২৪ সালে তা পরিবর্তিত হয়ে ঢাকা শহরের নীল এলাকা মাত্র ৪ শতাংশ, সবুজ এলাকা ১২ শতাংশ ও শহর এলাকা হয়েছে ৮০ শতাংশ। ফলে, পরিবেশ দূষণ ঘটেছে মারাত্মকভাবে। সেই সঙ্গে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার পথ অবরুদ্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতা ও জলজট হয়ে উঠেছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-স্বরূপ।
গত এক শতাব্দীতে স্থানীয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট পরিবেশ-প্রতিবেশগত উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে নগর অবকাঠামো বৃদ্ধির ফলে ক্রমান্বয়ে সবুজ আচ্ছাদন ও জলাভূমির পরিমাণ কমেছে। ফলে, বাড়ছে নগরের ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বাষ্পীভবন ও বায়ুদূষণ। দিনে দিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য শহরটি হয়ে উঠেছে বসবাসের অনুপযোগী।

ইতোমধ্যে ১০০ বছরের কৌশলগত এক কর্মপরিকল্পনায় ঢাকা শহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার সবুজায়ন বৃদ্ধি, জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ১৯টি স্থানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করে তিনটি বৃহত্তর কর্মসূচির আওতায় ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঢাকার নগর পরিকল্পনায় সবুজায়ন, জীববৈচিত্র্য ও জলাভূমি সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, সবুজ ও জলাভূমি রক্ষায় সকল বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ এবং পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা  প্রয়োজন।

ঢাকার খালগুলো দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যে খালগুলো এখনো উদ্ধার করা সম্ভব, সেগুলো দিয়ে এটি করা হবে। অবৈধভাবে দখল হওয়া খাল উদ্ধারে রাজউককে প্রতি সপ্তাহে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সম্ভব হলে ঢাকার উন্মুক্ত মাটিতে ঘাস লাগানোসহ নানা কাজে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। ঢাকার মৃতপ্রায় খালগুলো সচল করা এবং নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে খাল ও নালা পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে জবাদিহিমূলক, বলিষ্ঠ ও কার্যকর নিয়মিত তদারকি আবশ্যক।

×