ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১

অসহিষ্ণুতা কাম্য নয়

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অসহিষ্ণুতা কাম্য নয়

সম্পাদকীয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর লিখিত একটি খোলা চিঠি পাঠ করেন। চিঠির অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, আইন, ধর্ম ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

পঠিত খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের ‘অসহিষ্ণু, আক্রমণাত্মক, নৈরাজ্যবাদী, জমায়েত ও হামলা’ দেখে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এমন এক অস্থির অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের এই সংগঠনটি অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা চেয়েছে। এর পাশাপাশি প্রত্যাশা করেছে সরকারের নির্মোহ ভূমিকা ও জরুরি পদক্ষেপ।

এও প্রশ্ন তুলেছে যে, সরকার বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেরাই যদি এসব হস্তক্ষেপকারীর সাহস জুগিয়ে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার ভয় দেখিয়ে কোনো গোষ্ঠীর কথা মানতে বাধ্য করে, তাহলে এত দামে কেনা জুলাই অভ্যুত্থানের কোন্ আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়িত হলো? 
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পরিতাপের বিষয়, অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অসহিষ্ণু আক্রমণাত্মক নৈরাজ্যবাদী জমায়েত আমরা লক্ষ্য করছি। সেই সব জমায়েত থেকে অপছন্দের গোষ্ঠী  বা দলের বিরুদ্ধে শুধু হিংসাত্মক কথাবার্তাই বলা হচ্ছে না, ক্ষেত্র বিশেষে হামলাও চলানো হচ্ছে।’ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হামলা ও হত্যার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে।

এসব ঘটনা দীর্ঘদিন সমাজের নানা অমীমাংসিত সমস্যা ও গণতন্ত্রহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলেও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এভাবে চলতে থাকলে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের অনুভব তীব্রতর হবে এবং সংকট উত্তরণে আরও বেগ পেতে হবে সরকারকে। সে অবস্থায় যারা এসব ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করছেন এবং বিভিন্ন পরিচয় ও সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর বা নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে, তাদের থামাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘কারও বিশ্বাস নিয়ে অসম্মান, ঘৃণা বাচক শব্দ ব্যবহার, আক্রমণÑ এভাবে কোনো সহনশীল সংস্কৃতি নির্মাণ করা যায় না। সবাই যাতে মর্যাদা পান, সেই চিন্তা সবাইকে করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। নীতিনির্ধারক ও উপদেষ্টা ম-লীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা আসতে হবে।’

গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান, পরমতসহিষ্ণুতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সব রাজনৈতিক মত ও পথের পাশাপাশি দলীয় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সর্বোপরি মানুষে মানুষে সৌহার্দ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এসব বিষয়ে বিলক্ষণ জানেন এবং তার সরকার এর বিরুদ্ধে  অচিরেই একটি সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।

×