ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ২০:৪০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা

সম্পাদকীয়

অপরূপ নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশ। এদেশে সমুদ্র সৈকত, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, পুরাকীর্তি ও প্রতœসম্পদ, প্রবালদ্বীপ, ঝরনা, বন, পাহাড়, চা বাগান, হাওড়-বিল, নিঝুম দ্বীপসহ অসংখ্য আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে, যেগুলো যুগ যুগ ধরে পর্যটকদের মুগ্ধ করে আসছে। তাদের মনে সৃষ্টি করছে নানা বিস্ময়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর প্রকৃতির অপার মাধুর্য যেমন সারাবিশ্বকে আনন্দ আর ভ্রমণের খোরাক জোগায়, তেমনি বাংলাদেশও তার নৈসর্গিক ডালি সাজিয়ে ভ্রমণবিলাসী মানুষদের মনোরঞ্জন করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না। 

এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ১২৭০ মিলিয়ন, যা ১৯৫০ সালে ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন। এ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখের বেশি পর্যটক বিশ্ব ভ্রমণ করবেন। এমন একটি সম্ভাবনাময় শিল্প বিশ্বব্যাপী বিকশিত হলেও বাংলাদেশে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। নানা আকর্ষণীয় স্পট থাকার পরও বাংলাদেশ সেগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বব্যাপী মেলে ধরতে পারেনি। নিকট ভবিষ্যতেও সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। দেশের পর্যটন করপোরেশনের বেহাল দশা। তারপরও সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগে-পরে দেওয়া বিদেশীদের ভ্রমণ সতর্কতার নোটিশ বহাল থাকা অবস্থায়ই এবারও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে পালন করা হয়েছে বিশ্ব পর্যটন দিবস।

প্রতিবারের মতোই দিবসটি পালনে র‌্যালি, সেমিনার, লাইভ কুকিং শো, বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। দিবসটি উপলক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান বলেছেন, দেশের মোট জিডিপির শতকরা ৩.০২ শতাংশ আসে এ শিল্প থেকে। এ শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে ট্যুরিজম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসা দরকার। 
বিশ্বে কোনো দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যম পর্যটন। ইতোমধ্যে পর্যটনকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও পর্যটন একটি বড় সম্ভাবনাময় খাত। পর্যটন অর্থনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলো বড় দৃষ্টান্ত দেখালেও অপার সম্ভাবনাকে এখনও পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন খাতটি আশার আলো দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে সকলের অংশগ্রহণ কাম্য। এই শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত অংশগ্রহণ আবশ্যক। তাছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল থেকে শুরু করে অন্যত্র ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলা প্রয়োজন।

বিশেষ করে আন্তঃসংযোগ বাড়ানো চাই। এই খাতে মনোযোগ দিলে দেশের সৌন্দর্য, কর্মসংস্থান এবং জিডিপিতে এর অবদান বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বহির্বিশ্বে পর্যটন শিল্পকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে এ খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করে আগামীর বাংলাদেশ বিশ্ব পর্যটনে সম্ভাবনাময়  হয়ে উঠবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

×