ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

জাতিসংঘে ড. ইউনূস

-

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘে ড. ইউনূস

সম্পাদকীয়

জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারত্বের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের বছরে দেশের নতুন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সেখানে বাংলায় ভাষণ দান একটি অসাধারণ ঘটনা। বলা বাহুল্য, গত ৫০ বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি পারস্পরিক শিক্ষণীয়, সম্মিলিত যাত্রা। সীমিত উপায়ে বাংলাদেশ  বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা, ন্যায়, সমতা, মানবাধিকার, সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে অবদান রেখে আসছে।

শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস তাৎপর্যপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন, যা কেবল স্বদেশের জন্যই নয়, বিশ^বাসীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্যম সৃষ্টির সহায়ক। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমকালীন নানা বিষয় তুলে ধরে ভবিষ্যতের পৃথিবীর কথা ভাষণে উল্লেখ করেন তিনি। এটা বাস্তবতা যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল সংস্কারে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।

টেকসই সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রায় বিশ্বকে পাশে চায় বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে বাংলাদেশের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেছেন, সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ভাষণে তিনি এটাও উল্লখে করেন, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে।

এসব মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ১৬৮  বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। যে কোনো অবস্থায় নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা একইভাবে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে বাংলাদেশের নেতা জাতিসংঘের ভাষণে যা উল্লেখ করেছেন, সেটিও প্রণিধানযোগ্য। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত উভয় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেÑ সেটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংঘটিত হওয়া ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও সমানভাবে যে গুরুত্বপূর্ণ, সে জরুরি বার্তাটিও দিয়েছেন ড. ইউনূস।

বৈশ্বিক পরিসরে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং  বৈশ্বিক অর্থনীতি সুসংহতকরণে যুগপৎভাবে কাজ করার প্রেক্ষাপটে তিনি ‘তিন শূন্য’র লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তাব দেন। তার সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে পারবে। যেখানে পৃথিবীর প্রত্যেক তরুণ-তরুণী চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে।
ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী ও শিশুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর জন্য ড. ইউনূস বিশে^র শান্তিকামী মানুষের ধন্যবাদ পাবেন।
বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের আকাক্সক্ষা পূরণে বিশ^ সম্প্রদায়ের যে সর্মথন চেয়েছেন ড. ইউনূস, বিশ^ নেতারা সেই আহ্বানের মর্যাদা দিয়ে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবেন।

×